Monday, May 23, 2011

Master Craftsperson at Work - Chitta Pal of Krishnanagar













Artisan At Work - Photo by Madhumangal







মেদিনীপুরের নায়েক বিদ্রোহ


পলাশির চক্রান্তের পর ক্রমশঃ সোনার বাংলাকে ছারখার করে দিতে এবং ভারতের ধনীতম এলাকা বাংলার সম্পদ আর জ্ঞাণ লুঠ করে, শিল্প ধংস করে অযুত পরিমান সম্প ইংলন্ডে নিয়ে যেতে গিয়ে বাংলার ওপর অবর্ণনীয় অত্যাচার আর লুন্ঠনের কর্মপদ্ধতিতে বাংলা ছারখার হয়ে যায়, যার অন্যতম উদাহরণ ছিয়াত্তরের মন্বন্তরে ব্রিটিশদের হিসেবেই এককোটির ওপর নির্দোষ মানুষের খুন হয়ে যাওয়া এর পর বাংলার চিরাচরিত জমিদারদের ওপর নেমেএল কর্নওয়ালিসের চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের খাঁড়া
একে একে ছারখার হয়ে গেল বাংলার জমিদার আর সাধারণ মানুষও বাংলার খুন হয়ে যাওয়া মানুষ, লুঠ করা সম্পদ আর জ্ঞাণপূর্ণ সভ্যতার শ্মশানের ওপর রচিত হল ব্রিটেনের নব শিল্পবিপ্লবজনিত সভ্যতা মেদিনীপুর জেলায় জমিদারদের সংখ্যা অনেক বেশি থাকায় এই জেলায় পাইক বরকন্দাজসহ রাজকর্মচারীদের সংখ্যা ছিল অনেক বেশি এ ছাড়াও কোম্পানি আমলে বাংলার নবাবী সৈন্য বাহিনী ভেঙে দেওয়ায় সেনা দলে কাজ করা বহু মানুষই প্রায় বেকার হয়ে পড়েন লুঠের কাজে মত্ত কোম্পানি এর আগেই জেলির পশ্চিমে জঙ্গল-মহলে পাইপ আর চোয়াড়দের জায়গির-জমিও বাজেয়াপ্ত করে এ ফলে ১৭৯৯তে এই অঞ্চলে ব্যাপক পাইক-চোয়াড় বিদ্রোহ গড়ে ওঠে 
১৭৯৯ সালে বগড়ি পরগণার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে চোয়াড় বিদ্রোহের রোষানল জ্বলে উঠেছিল ১৮০৬ সালে বাংলা লুন্ঠনরত ব্রিটিশ বণিক-শাসকেরা বগড়ির নায়েক অথবা লায়েকদের জায়গীর বাজেয়াপ্ত করলে বিদ্রোহ আরও ছড়িয়ে পড়তে থাকে ১৮১৬ পর্যন্ত এই বিদ্রোহের আগুণে শাসক সমাজ পুড়তে থাকে
চোয়াড় বিদ্রোহের পর বগড়ির নায়ক বিদ্রোহ মেদিনীপুর তথা বাংলার অন্যতম স্মরণীয় ঘটনাক্রম মেদিনীপুর জেলার উত্তরাংশ জুড়ে নায়েকদের বিদ্রোহই ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আমলে একের পর এক আছড়ে পড়া আন্দোলনের অন্যতম শৃঙ্খল নায়েক সমাজ চোয়াড়দেরই সমান এক সম্প্রদায় যারা বগড়ির রাজবংশের কাছ থেকে জায়গির পেয়েছিল নায়েক সমাজ সেই জায়গির জমিতে চাষ করে তাদের জীবিকা নির্বাহ করত আবশ্যিক হলে তারা বগড়ি রাজার অধীনে যুদ্ধকরতে পিছপা হত না ইংরেজ বণিকেরা বাংলার শাসন ক্ষমতা দখল করে সারা দেশের সঙ্গে মেদিনীপুরের বগড়ি পরগণায়ও অত্যধিক কর দাবি করে রাজা ছত্র সিংহ সেই দাবি না মেনে প্রতিবাদ করলে জমিদারি ছত্র সিংএর হাত থেকে কেড়ে নিয়ে অন্য ব্যক্তির সঙ্গে চুক্তি করার বন্দোবস্ত করে একই সময় বগড়ির জায়গির ভোগকরা নায়েকদেরও তাদের অধিকার থেকে উচ্ছেদ করা হয় নায়েকেদের জমি কেড়ে নেওয়ায় তাদের জীবিকা প্রশ্নচিহ্নের মুখে পড়ে
এমতাবস্থায় নায়েক সর্দার অচল সিংহ নায়েকদের নেতৃত্ব দিয়ে তাদের ক্ষোভকে সংঘবদ্ধরূ প্রদান করেন অচল সিংহ দীর্ঘদিন বগড়ি রাজের অধীনে সেনাবাহিনীর উচ্চপদে কর্মকরেন এবং সেই অভিজ্ঞতায় তিনি নায়েকদের সংঘবদ্ধ করে ছোটছোট সৈন্য বাহিনীতে গড়ে তোলেন নেতার অধীনে নায়েকরা ইংরেজ সৈন্যের মুখোমুখি হওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন গড়বেতার শালবনের মধ্যে নায়েকেরা ঢুকে সমগ্র এলাকায় বিদ্রোহের আগুণ জ্বালিয়ে দেয় এই বিদ্রোহে পার্শ্ববর্তী হুগলি অথবী বিষ্ণুপুরও থরথর করে কাঁপতে থাকে ইংরেজরা ওকলি নামক এক লেনাপতির নেতৃত্বে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী এউ বিদ্রোহ দমন করতে পাঠায় নায়েকেরা দলবদ্ধ নাহয়ে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে ইংরেজদের ওপর আক্রমণ শানাত, যুদ্ধশেষে যেন ভোজবাজির মত অদৃশ্য হয়ে যেত যোগেশচন্দ্র বসু তাঁর মেদিনীপুরের ইতিহাসে বলছেন বিদ্রোহীদের দমন করিতে অপারগ হইয়া ইংরাজ সেনাপতি একদিন রাত্রিকালে কয়েকটি কামান একত্রিত করিয়া ক্রমাগত গোলাবর্ষণে সমস্ত বনভূমি বিধ্বস্ত করিয়া ফেলিলেন লায়েকদের সম্মুখে ভয়ঙ্কর বিপদ দেখাদিল কামানের গোলাবর্ষণে অবশিষ্ট নায়েকগণ ছিন্নভিন্ন হইয়া গেল ইংরেজ সৈন্যরা সেই রাতেই নায়েকদের ঘাঁটিগুলি ধংস করিয়া ফেলিল পরদিন বৃক্ষশাখায় বনান্তরালে ও নদীতীরে বহুসংখ্যক নায়েক নরনারীকে হত ও আহত, বন্দী করা হইল কিন্তু নায়েকগণের দলপতি অচল সিংহএর কোনো সন্ধান পাওয়া গেল না ইংরেজ সৈন্যাধক্ষ তাঁহাকে ধরিবার জন্য কিছু সৈন্য বগড়িতে রাখিয়া অবশিষ্ট সৈন্য হুগলী ও মেদিনীপুরের সেনা নিবাসে পাঠাইলেন
অচল সিংহ নতুন করে নায়েকদের সংগঠিত করতে লাগলেন বিদ্রোহের আগুন নিভেও নিভলনা গনগনির মাঠথেকে সরে গিয়ে অচল সিংহ দূরের বনে ঘাঁটি গাড়লেন নতুন উদ্যমে গনগনিতে ইংরেজদের াক্রমণ সহ্যকরে পালিয়ে যেতে পেরেছিলেন তাঁদের আবার নতুন করে সাজিয়ে তুললেন বিদ্রোহের আগুনে সেঁকে ১৮০৪এ ইংরেজরা ওড়িশা দখল করার পর বহু মানুষ, সেনা আর নানান প্রফেশনের মারাঠি আর রাজপুত নায়েকদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তাদের বাহিনীর জোর বাড়য়ে তুলল এই মিলিত বাহিনী অত্যন্ত ক্ষিপ্ত হইয়া ইংরেজাধিকৃত পল্লীসমূহে প্রবেশ করিয়া এবং ধনীদের সর্বস্ব কাড়িয়া লইয়া নিজেদের নষ্ট ঐশ্বর্য পুনরুদ্ধার করিতে লাগিল ইংরেজগন মরিয়া হইয়া ্চল সিংহ এর সন্ধান করিতে লাগিল এই সুযোগে বগড়ীর রাজ্যচ্যুত রাজা ছত্র সিংহ ইংরেজদের হিতসাধন করিয়া প্রষ্ট গৌরব উদ্ধার করিবার মানসে বিবিধ কৌশলে বিশ্বাসঘাতকতাপূর্বক অচল সিংহকে ধৃত করিয়া ইংরেজ সৈন্যাধক্ষের হস্তে সমর্পণ করে ইংরেজগণ নায়েক-বীর অচল সিংহকে গুলি করিয়া হত্যাকরে নায়েক-বীর অচল সিংহ ছত্র সিংহের আচরণে ক্ষুব্ধ হইয়া তাঁহার মস্তকে যে অভিসম্পাত বর্ষণ করিয়াছিলেন তাহা বর্ণ বর্ণে সফল হইয়াছেল  অচল সিংএর মৃত্যুর পর নায়েকরা নতুন নতুনভাবে ইংরেজদের বিরুদ্ধে ক্রমাগত যুদ্ধ চলিয়ে যায় ১৮১৬ সাল পর্যন্ত বিচ্ছিন্নভাবে

Sunday, May 22, 2011

Saraswati River of Bengal


Saraswati River refers to a river, that was a distributary of the Bhagirathi and is now no more there but was active till around the 16th century AD. The course and condition of the Saraswati has played an important role in the development and decline of river port towns in Bengal. Initially, the major port town was Tamralipta, after the decline of which Saptagram rose and declined, and finally Kolkata came up.

Earlier course

At Tribeni near Bandel in Hooghly District in the Indian state of West Bengal the Bhagirathi branched off into three streams The Saraswati flowed south-west beyond Saptagram, the Yamuna (this is distinct from the river of same name in northern India and several streams of the same name in eastern Bengal) flowed south-east, and the Bhagirathi proper flowing through the present Hooghly channel to Kolkata and then through Adi Ganga, past Kalighat, to the sea. It is believed that the Saraswati flowed into an estuary near present-day Tamluk and received the waters of not only the Rupnarayan and Damodar but several other smaller streams. Some time after the 8th century AD, Tamralipta lost its importance primarily on account of silting up of the mouth of Saraswati and the consequent shifting of its course.
The Saraswati moved to a position when it flowed out at Triveni and after a movement towards the west turned to the southeast to meet the Hooghly River again at Betore opposite present Garden Reach, thus forming a loop. Saptagram was situated on the upper part of the loop on the southern bank. It is believed that the Saraswati had an independent course to the sea.

Change in course

In the sixteenth century, the main waters of the Bhagirathi, which earlier used to flow through the Saraswati, started flowing through the Hooghly channel. In the course of time, the upper Saraswati dried up, but the Bhagirathi or Hooghly has abandoned the old Adi Ganga channel and flows through the lower course of the Saraswati below Sankrail.

Mention of Saraswati River

There is a clear indication of the river in Van den Brouck’s map of 1660. A hundred and fifty years prior to Van den Brouck’s map, the Bengali poet Bipradas Pipilai gave an account of the river and the surrounding area in his Manasamangal. As the merchant ship of the trader Chand Sadagar proceeded to the sea, he passed through Triveni and Saptagram and the tri junction of the Ganges, Saraswati and Yamuna.He wrote:
Ganga aar Saraswati, Yamuna vishal oti
(The Ganges and Saraswati, the Jamuna so large)
(Taken From Wiki)

দক্ষিণবঙ্গের সরস্বতী নদী

বাঙালির ইতিহাস- আদিপর্বতে নীহাররঞ্জন  রায় আনুগামী হয়ে দেখা যাক সরস্বতী নদী বিষয়ে তিনি কী মত পোষণ করছেন-
ভান ডান ব্রোক-এর মানচিত্র
ভগীরথ কর্তৃক গঙ্গা আনয়ণ গল্প রামায়ণেও আছে এবং সেখানেও গঙ্গা বলিতে রাজমহল-গঙ্গাসাগর প্রবাহকেই যেন বুঝাইতেছে. যুধিষ্ঠির গঙ্গাসাগর-সংগমে তার্থস্নান করিতে আসিয়াছিলেন, এবং সেখান ঙইতেই গিয়াছিলেন কলিঙ্গদেশে. রাজমহল-গঙ্গাসাগর প্রবাহই যে যথার্থ ভাগীরথী, ইহাই রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণের ইঙ্গিত, এবং এই প্রবাহের সঙ্গেই সুদূর অতীতের সূর্যবংশীয় ভগীরথ রাজার স্মৃতি বিজড়িত. উইলায়ম উইলককস সাহেব এই ভগীরথ-ভাগীরথী কাহিনীর যে পৌর্তিক ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাহা ইতিহাস সম্মত বলিয়া মনে হয় না. পদ্মা-প্রবাহ অপেক্ষা ভাগীরথী প্রবাহ যে  অনেক প্রাচীণ এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহের অবকাশ নাই. যাহা হউক জাও ডি ব্যারোস(১৫৫০) এবং ভন ডান ব্রোকের  নকশায়(১৬৬০) পুরাণোক্ত প্রাচীণ প্রবাহপ থের ইঙ্গিত বর্তমান বলিয়া মনে হয়. এই দুই নকশার তিলনামূলক আলোচনা করিলে দেখা যাইবে, সপ্তদশ শতকে জাহানাবাদের নিকট আসিয়া দুইভাগে বিভক্ত হইয়া দামোদরের একটি প্রবাহ(ক্ষমানন্দ কথিত বাঁকা দামোদর) উত্তর-পূর্ববাহিনী হইয়া নদীয়া-নিমতার দক্ষিণে গঙ্গায়, এবং আর একটি  প্রবাহ দক্ষিণ বাহিনী হইয়া নারায়ণগড়ে্র নিকট রূপনারায়ণ-পত্রঘাটার সঙ্গে মিলিত হইয়া তম্বোলি বা তমলুকের পাশ দিয়া গিয়া সমুদ্রে পড়িতেছে. আর মধ্য ভূখণ্ডের ত্রিবেণী-সপ্তগ্রামের নিকট হইতে আর একটি প্রবাহ(অর্থাত সরস্বতী) ভাগীরথীর হইতে বিযুক্ত হইয়া পশ্চিম দিকে দক্ষিণবাহিনী হইয়া কলিকাতা-বেতোড়ের দক্ষিণে পুণর্বার ভাগীরথীর সঙ্গে যুক্ত হইয়াছে. এক শতাব্দী আগে, যোড়শ শতকে জাও ডি ব্যারোসের নকশায় দেখিতেছি, সরস্বতীর একেবারে ভিন্নতর প্রবাহ. সপ্তগ্রামের(Satigam) নিকটেই সরস্বতীর উত্পত্তি, কিন্তু সপ্তগ্রাম হইতে সরস্বতী সোজা পশ্চম বাহিনী হইয়া যুক্ত হইতেছে দামোদর প্রবাহের সঙ্গে, বাঁকা দামোদরের সঙ্গমের নিকটেই.  এই বাঁকা দামোদরের কথা বলিয়াছেন সপ্তদশ শতকের কবি ক্ষেমানন্দ(১৬৪০) তাঁহার মনসামঙ্গল কাব্যে. ...যাহাই হউক, দামোদর বর্ধমানের দক্ষিণে যেখানে হইতে দক্ষিণবাহী হইয়াছে, সেখানেই সরস্বতীর সঙ্গে তাহার সংযোগ- ইহাই জাও ডি ব্যারোসের নকশার ইঙ্গিত.আমার অনুমান, এই প্রবাহপথই গঙ্গা-ভাগীরথীর প্রাচীণতর প্রবাহ পথ, এবং সরস্বতীর পথ ইহার নিম্নঅংশ মাত্র. তাম্রলিপ্তি হইতেই বাণিজ্যপোতগুলি পাটলিপুর্ত-বারানসী পর্যন্ত যাতায়াত করিত. 
এর পর অন্য তথ্য দেওয়া যাবে.

দিনাজপুরের ঢোকরা বুনন - ছবি মধুমঙ্গল





মেদিনীপুরের চোয়াড় বিদ্রোহ৬


১৭৯৯এর জুনে চোয়াড়-পাইকদের সঙ্গে পাশের রাজ্য মারাঠা অধিকৃত ওড়িশার পাইকরা এসে যোগ দেয় এরপর রায়গড়, বীরভূম, শতপতি, শালবনী পরগণায় নতুন করে খন্ডযুদ্ধ শুরু হয় বিদ্রেহ দমন করা যাচ্ছেনা দেখে রেভিনিউ বোর্ড ভুল বুঝতে পেরে চোয়াড়দের বিষয়ে জমিদারদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত নেয়, কিন্তু আক্রমণ আর লুঠ নিরবিচ্ছন্নভাবে চলতেই থাকে সেপ্টোম্বরে শিরোমণি গ্রামে সরকার পক্ষের আটজনকে খুন করে চোয়াড় বিদ্রোহীরা অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে মানবাজার লুঠ হয় অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে বীরভূমের নানান অঞ্চলের ধনীদের বাড়ি লাল সিংএর নেতৃত্ব লুঠ হয় গ্রামের পর গ্রামে সরকারের অনুপস্থিতির বহর বাড়তে থাকায় ১৮০০র জানুয়ারিতে পুরাবিত্রা আর আনন্দিনী দুটি তালুকের চাষীরা খাজনা বন্ধকরে বিদ্রোহীদের সঙ্গে যোগ দেয় ১৮০০র পর প্রাইসের লেখায় বিদ্রোহীদের কোনো সংবাদ পাওয়া যায় না, কিন্তু ওম্যালির রচনায় আমরা পাচ্ছি যে এি বিদ্রোহের আগুন কিন্তু দীর্ঘকাল ধরে দ্বলতে থাকে
আশংকার ব্যাপার হল ইংরেজদের আলোচনার প্রস্তাব রেভিউনিউ বোর্ডে ঠিক হয় পাইক আর চোয়াড় এবং জমিদারদের মধ্যে বিভেদ তৈরি করতে হবে সুপারিশ হল পাইকদের খাজনাহীন জমি ফিরিয়ে দেওয়া হবে জঙ্গলমহলে সমস্ত শান্তিরক্ষার দায় থাকবে জমিদারদের ওপর পাইকদের নানান সুযোগসুবিধে দিতে হবে রাজস্ব বাকি পড়লে জঙ্গলমহলে জমিদারি নীলামে উঠবেনা মেদিনীপুরের ম্যাজিস্ট্রেট নির্দেশ দিলেন পাইকদের, করদারদের থানার কাজে নিযুক্ত করা হবে হাড়ি, বাগহি প্রভৃতি যে সব অনুন্নত সম্প্রদায়ের মনে ক্ষোভ আছে তাদের তালিকাভুক্ত করতে হবে এবং নিজের সম্প্রদায়ের সর্দারদের অধীনে রাখতে হবে এ ছাড়াও আলাদা পুলিশ বাহিনীও মোতায়েন করা হবে
প্রাইস বলছেন, অনুচরদের ওপর চোয়াড় সর্দারদের প্রভাব অসাধারণ একজন সর্দারের অধীনে দুই থেকে চারশ চোয়াড় থাকেন তারা বাসকরে জঙ্গলের গভীরতম অঞ্চলে এর নাম কেল্লা ।।এরা কোনোদিনই জমিদার বা ভূস্বামীদের সেবা করেনি, সর্দারের নির্দেশ এদের কাছে চরমতম নির্দেশ সেনাবাহিনী দিয়ে জয় করতে না পেরে কৌশলে এদের অনেক ক্ষোভ প্রশমিত করে এদের বিদ্রোহ দমন করা হয় তবে এই বিদ্রোহের ফলে মেদিনীপুর বা বাঁকুড়ার সীমান্ত নতুন করে সাজানো হল বাঁকুড়া, মেদিনীপুর আর মানভূম এঞ্চল নায়ে তৈরি হল জঙ্গলমহল জেলা এই জঙ্গলহমলই বাঁকুড়া জেলা ক্রমশঃ ইংরেজদের সুকৌশলী শাসনে সর্দাররা নিস্তেজ হয়ে পড়েন এবং বাংলার অন্যতম প্রধাণ বিদ্রেহ ক্রমশঃ নির্বাপিত হল

মেদিনীপুরের চোয়াড় বিদ্রোহ৫


১৭৯৯ বছরের শুরুতে প্রাইস বলছেন, মেদিনীপুর পরগণাটি জনমানবহীন হয়ে পড়ে একদিকে নারা,ণগড়, অন্যদিকে মেদিনীপুর শহরের চৌদ্দ মাইল দূরের হুদ্দাঘোষপুর থানায ভরঙ্কর তান্ডব চালায় শালবনীর তহশিলদারের কাছারি, দপ্তর, সৈন্য ছাউনি সবকিছু পুড়িয়ে দেয় কর্মচারীদের হত্যা হচ্ছে দেখে প্রজারা পালাতে শুরু করে কয়েকদিনের মধ্যে শালবনী শ্মশানে পরিণত হল মেদিনীপুরের অদূরে আনন্দপুরের থানা জ্বালিয়ে দেওয়ার উপক্রম হয় বিদ্রেহীরা নানান কাছারির জমির নানান নথিপত্র পুড়িয়ে বহ্নুত্সব করতে থাকে
বিদ্রোহীদের হুমকিতে রাজস্ব আদায় প্রায় বন্ধ হয়ে যায় ট্যাপা-বাহাদুরপুরে রাজস্ব আদায়ের কর্মচারী পাওয়া যাচ্ছিলনা কালেক্টর লিখলেন, যদি সেনাবাহিনী পাঠানো না হয়, তাহলে পরের বছর কোনো কৃষিকাজ করা সম্ভব হবে না মেদিনীপুর শহরের চারদিকে চোয়াড়-পাইকদের তীব্র আক্রমণ চলতেই থাকে শহরে সেনাদল থাকায় শহরে তাদের আক্রমণ না হলেও জেলার নানান পরগণায় এই আক্রমণ ক্রমাগত চলে ৭ আর ৯ মার্চ রেভিনিউ বোর্ডকে চিঠিলিখে কালেক্টর জানান সকলেই মেদিনীপু শহরে এসে আশ্রয় নিয়েছে, মফঃস্বলের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গিয়েছে গুজব ছড়াতে শুরু করে চোয়াড় বিদ্রোহীরা ১৯ মার্চ মেদিনীপুর শহর আক্রমণ করে শহর পুড়িয়ে দেবে শহরের আশ্রয় নেওয়া বাসিন্দারা আতঙ্কি দিশাহারা হয়ে পড়ে মেদিনীপুরের সেনা প্রধানের কাছে কালেক্টর একটি চিঠি পাঠান, আমি জেলার অবস্থা বর্ণনা করার ভাযা খুঁজে পাচ্ছিনা শোচনীয় অবস্থা মেদিনীপুর পরগণার বিদ্রোহীরা অবাধে লুঠ করছে আমার পক্ষে দেখা সম্ভব হচ্ছেনা ১৪মার্ট রাতে দুটি গ্রাম লুঠ হয়েছে ১৫মার্ট শিরোমণি নামে বড় গ্রামও লুঠ হয় দুই গ্রামেই প্রচুর শষ্য ছিল, তাতে যে আগুণ লাগিয়ে দেয় সেই আগুন পরেরদিন পর্যন্ত জ্বলছিল প্রচুর সরকারি দলিল নষ্ট হয়েছে শতপতি অঞ্চল পুণর্দখল সম্ভব হয়নি এই অঞ্চলটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বাহাদুরপুর পরগণা এখনও জনশূন্য কেউই সেখানে যেতে সাহস পাচ্ছনা অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থানেও একই অবস্থা বিরাজ করছে সমগ্র মেদিনীপুর পরগণার বাইরের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন সয়ে শয়ে মানুষ শহরে আসছেন আশ্রয় নিতে ার শহরের লোক শহরের হাইরে পালাচ্ছেন আতঙ্কিত হয়ে সংবাদটি সত্য বলে মনে হচ্ছে আর কিছুদিন পরে (মেদিনীপুর)শহর আক্রমণ করে ধংস করে ফোলবে সমগ্র জেলায় রাজস্ব আদায় সম্পূর্ণ বন্ধ আছে, সমস্ত জেলায় আরাজক অবস্থা চলছে, লাঙলের একটিো আঁচড় পড়ে নি এই পরগণার ২৬টি গ্রামে বহু সরকারি সম্পত্তি লুঠ হয়েছে ।।। আমার সুনাম আর মানসিক বল নষ্ট হতে বসেছে আমার অবস্থা এতই শোচনীয় যে চোয়াড়দের এই অসহনীয় দৌরাত্ম্য আমাকে নীরবে বসে দর্শকেরমত চুপ করে দেখতে বচ্ছে ।।।এখন বেলা বারেটা, এখানথেকে দুই ক্রেশদূরে একটি গ্রামে লুঠ করে সেখানে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামের অধিবাসীদের রক্ষার জন্য একটি সেনাদল পাঠানোর তোড় জোড় চলছে এটাই জেলার প্রকৃত অবস্থা
যে গ্রামটির কথা লিখছেন কালেক্টর সেই মেদিনীপুর শহরেরে থেকেও বড় গ্রামটি গোবর্ধন দিকপতির নেতৃত্বে দুহাজার চোয়াড় লুঠ করে পুড়িয়ে দেয় উল্লিখিত সেনা বাধা দিতে এলে নিহত হয় বিদ্রোহ দমন করতে না পেরে অস্থির হয়ে এই বিফলতার কারণ খুঁজতে গিয়ে কোম্পানির কর্মচারীদের সন্দেহ জমিদার দিকে পড়ে চোয়াড় রেবেলিয়ন বইতে প্রাইস বলছেন, বিদ্রোহীরা জানত অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত লৈন্যবাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ সমরে পেরে ওঠার আশা নেই সুতরাং তারা এমন আবস্থা তৈরি করল, জমিদার অথবা অবস্থাপন্ন পরিবারে অথবা সরকারি কর্মচারীদের কাছথেকে সেনা বাহিনী খাওয়ার সংগ্রহ করতে না পারে তাহলেই খাদ্যের অভাবেই সরকরি বাহিনীকে পালাতে হবে ফলে তারা সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক করে দেয় যাতে সেনী বাহিনীকে কেউ খাবার দিয়ে সাহায্য না করে বিদ্রোহীরা একে রাণী শিরোমণির নির্দেশ রূপে প্রচার করে ফলে বহু সেনা বাহিনীকে খাদ্যের অভাবে শহরে ফিরে আসতে হয়েছে
প্রাইস চোয়াড়দের শৃঙ্খলবোধের কথাও শ্রদ্ধায় উল্লেখ করেছেন আনন্দপুর গ্রাম আক্রমণকালে সর্দার মোহনলালের অপরিসীম নীতিবোধ আর নিজেদের সেনার ওপর প্রভাব দুটিরই উদাহরণ দিয়েছেন প্রাইস এমতঅবস্থায় প্রচুর অত্যাচারিত প্রজাও এই বিদ্রেহে স্বইচ্ছায় যোগদানও করে সে সংবাদও কালেক্টরের লেখা থেকে পাওয়া যায় বোর্ অব রেভিনিউকে লেখা চিঠিতে তিনি বলছেন, সমগ্র মেদিনীপুর জেলাটি জনমানবহীন আর ধংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।।। সংক্ষেপে বলাযায়, জঙ্গল অঞ্চলের সব জমিদারও চোয়াড়দের সঙ্গে মিলেছে শাসকদের সন্দেহ হয় জমিদারদের সরাসরি সাহায্য না পেলে চোয়াড়রা এতটা প্রাবল্যে আক্রমণ করতে পারত না রানি শিরোমণি সেই বিদ্রোহের গোপন পরামর্শদাত্রী ছিলেন, তারা সন্দেহবশে রানী শিরোমণিসহ অনেক জমিদারকে অন্তরীণ করে রাখে কিন্তু কর্ণগড় অধিকার করার সঙ্গে সঙ্গে সব সৈন্যও দুর্গত্যাগ করে পালাতে থাকে মেদিনীপুরে আরও সৈন্য আসতে শুরু করে, ফলে মেদিনীপুরের ওপর আক্রমণের আশংকা অনেকটা দূর হয় কালেক্টর কিছুটা স্বস্তি পেয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করতে থাকে তার প্রতিশ্রুতি যারা আত্মসমর্পণ করবে তাদের অভিযোগ বিচার করে দেখা হবে

মেদিনীপুরের চোয়াড় বিদ্রোহ৪


প্রাইস তার চোয়াড় রেবেলিয়নএ লিখছেন, ১৭৯৮-১৭৯৯, মেদিনীপুরের ইতিহাসকে ভয়ঙ্কর চোয়াড় বিদ্রোহের ইতিহাস হিসেবে চিহ্নিত করে রেখেছে কত রোমহর্ষক ঘটনা, চোয়াড় বিদ্রোহকে বিভত্স করে তুলেছিল সরকার তাদের দীর্ঘকালের ভোগদখল করা জমি কেড়ে নেওয়ার প্রতিবাদে চোয়াড় সর্দারেরা আর পাইকেরা ভয়ানক মূর্তিতে আত্মপ্রকাশ করেছিল জঙ্গলমহলের প্রত্যকটি আদিবাসী এই অত্যাচারকে নিজেদের বিরুদ্ধে অত্যাচার হিসেবে ধরে নিয়িছেল ম্যাজিস্ট্রেটের দরজা পর্যন্ত তারা হত্যা আর ধংসের আঘাত হেনেছে মেদিনীপুরের সাধারণ পুলিশ আর সৈন্যদল এই বিদ্রোহ দমন করতে ব্যর্থ হওয়ায় জেলায় সেনাবাহিনী পাঠানো হয় শাসককুলের দীর্ঘসময়ের অস্থিরতা, নানান পাশবিক হত্যাকান্ডের পর পরের বছর জেলায় আংশিক শান্তি ফিরে আসে এঅ বিদ্রোহ ১৭৯৮তে হঠাতই শুরু হয় নি বহু আগে থেকেই এর লক্ষ্মণ দেখা যাচ্ছিল প্রশাসনের বোঝা উচিত ছিল
মেদিনীপুরের গেজেটের লেখক ওম্যালিও একই সুরে চোয়াড় বিদ্রোহের বর্ণনা করেছেন ওম্যালিসহ অনেকেরই অভিযোগ, বিদ্রোহীরা নিরীহ প্রজাদের ওপরেও অত্যাচার করেছে এর একটা বাস্তব কারণ রয়েছে ইংরেজরা চোয়াড় আর পাইকদের জমি দখল করে প্রজা পত্তন করেছিন এ কথা আগেই বলা গিয়েছে সেই পত্তনি প্রজাদের ওপরেও যে বিদ্রোহীরা প্রতিশোধ স্পৃহা চরিতার্থ করবে একথা বুঝতে খুব বড় বিশেষজ্ঞ হওয়ার প্রয়োজন হয় না তবে সে সময়কার শাসকেরা স্বীকীর করেছেন বিদ্রোহীরা প্রথমে প্রজাদের ওপরে আক্রমণ করে নি বিদ্রেহীরা তাদের প্রথমে তাদের শুধু চাষ করতে দেয় নি তাদের রণনীতি ছিল, কেড়ে নেওয়া জমি থেকে যেন শাসকেরা এক টাকাও রোজগার করতে না পারে যারা বিদ্রোহীদের সঙ্গ দেয়নি বিদ্রোহীরা সেই প্রজাদের ইংরেজদের সহযোগী হিসেবে দেখেছিলমাত্র
ধিকিধিকি জ্বলতে থাকা বিদ্রোহ ক্রমশঃ জ্বলতে শুরু করে মেদিনীপুরের রায়পুর পরগণা অঞ্চল থেকে পরগণার জমিদার দুর্জন সিংহ ইংরেজদের দাবিমত রাজস্ব দিতে অপারগ হওয়ায় জমিদার দুর্জনের জমিদারি কেড়ে নিয়ে অন্য একজন ক্রেতার কাছে অনেক বেশি মূল্যে বিক্রয় করে দেয় দুর্জন প্রতিশেধের জন্য চোয়াড়-পাইকদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেন চোয়াড় পাইকরা রায়পুরে প্রবেশ করে নতুন জমিদারকে তাড়িয়ে জমিদারি দখল করে তহশিলদারকে খাদ্যদ্রব্য দাবি করলে তহশিলদার পালিয়ে যায় ১৭৯৯এর মার্চের শীতে রায়পুরের বেশকিছু গ্রাম দখল করে নতুন প্রজাদের ওপর আক্রমণ শুরু হয়, অনেকে আহত হয়, প্রজারা পালিয়ে যেতে থাকায় তাদের ছেড়ে যাওয়া জমি দখল করে বিদ্রোহীরা আমলা-কর্মচারীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে পালিয়ে এসে মেদিনীপুরে আশ্রয় নেয় রায়পুরে সৈন্য উপস্থিত হলে যুদ্ধশুরু হয় এবং বিদ্রোহীরা রায়পুর ছেড়ে পালায়
মে মাসে রায়পুরের নায়েবের কাছারি লুঠ করে জ্বালিয়ে দেয় গুনারি থাকার কাছারিতে সৈন্য দলের ছাউনি আক্রমণ করলে সারারাত যুদ্ধ হয় বিদ্রোহীরা পালিয়ে যায় আবার দেড়মাস পর আবার বিদ্রোহীরা পরগণায় সৈন্যদলকে তাড়িয়ে পরগণা দখল করে প্রধান বাজার কাছারি দখল করে পুড়িয়ে দেয়, বিদ্রোহীরা মাটির দুর্গ তৈরি করে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করে এবার রামগড় পরগণা দখল হয় জুনে পরগণার এক বড় অংশ জনশূণ্য হয়ে পড়ে চন্দ্রকোণা আক্রমণ করেন গোবর্ধন দিকপতির নেতৃত্বে চোয়াড় পাইকরা কলকাতা থেকে আসা সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে হেরে বিদ্রোহীরা পালায় নয়াবসান আর বড়জিতে আক্রমণ করে ধনীদের বাড়ি থেকে সম্পদ আর খাদ্য লুঠ করে এরপর কাশীজেড়া, বাসুদেবপুর, তুর্কাচর, জনেশ্বর, বলরামপুর, জুবাজল, রামগড়, শালবনী প্রভৃতি পরগণার ওপর আক্রমণ আর লুঠ চালাতে থাকে বিদ্রোহীরা নিরাপত্তার অভাবে, রাতে মেদিনীপুর শহর পাহারাদেওয়ার জন্য একটি বাহিনী সবসময়ে জন্য রাখা হতে থাকে চ্যাপা বাহাদুপুরেরে অত্যাচারী ইজারাদার কৃষ্ণ ভুঁইয়া চোয়াড় বিদ্রোহীদের হাতে প্রাণ হারান গ্রামের পর গ্রামের মানুষ পরগণা ছেড়া পালাতে থাকে, ইংরেজরা সেনা মোতায়েনের অভয় দিয়েও তাদের পলায়ন রোখা যায় নি

মেদিনীপুরের চোয়াড় বিদ্রোহ৩


লুঠেরা ইংরেজ বণিকদের, এবং তাদের সাম্রাজ্যের সহচর বন্ধু, অত্যাচারের সরাসরি সঙ্গী লুঠেরা মধ্যবিত্ত বাঙালির যখন থেকেই জঙ্গলমহলে সম্পদের ওপর বিষ নজর পড়েছে, তখন থেকেই নরমে গরমে গণতন্ত্রপ্রিয়, চরম আত্মসম্মানবোধের অধিকারী আদিবাসীদের সঙ্গে ছোটখাট গন্ডগোল চলছিল এই অঞ্চলের অদিবাসীরা নিজেদেরমত করে বিনাখাজনায় স্বাধীণভাবে চাষবাস করে পূজ্য প্রণম্য প্রকৃতির ক্ষতি না করে নিজেদের সমাজের বিকাশে নীরবে কাজ করে চলেছিলেন ইংরেজ আমলেক আগে কী কেন্দ্রিয় শাসক কী স্থানীয় শাসক কেউ তাঁদের এই প্রবণতায় হস্তক্ষেপ করতে চায় নি কিন্তু ইংরেজ শাসক আর তাদের নব্য লুঠেরা বন্ধুরা, যারা এতদিন সনাতন সমাজের কঠোর নজরদারিরমধ্যে বসবাস করতে বাধ্য থাকত, ইংরেজ শাসকদের পদপ্রান্তে আনত তারাই সনাতন সমাজে নামিয়ে আনল অত্যাচারের ঘুর্ণাবাত চিরাচরিত রাজস্ববিহীন এই জমিগুলি ইংরেজরা বলপূর্বক কেড়ে নিয়ে উচ্চ খাজনায় নব্যজমিদারদের অধিকারে দিয়ে দিতে থাকে এই সমাজগুলির প্রতিবাদ ক্রমশঃ ধ্বনিত হতে থাকে আত্মসম্মানবোধে ভারপুর এই সমাজগুলির প্রতিবাদ অত্যাচারের নিচে দাবিয়ে দিতে দিতে এই সব জমিতে প্রজা পত্তন ঘটতে থাকে আর হাজার হাজার বছরের দখলি জমি চোখের সামনে বেহাত হয়ে যাওয়ায় ধংসের মুখে পড়ে সমগ্র সমাজ আর এতদিনের বিকশিত সংস্কৃতি যার অনিবার্য পরিণতি বাঁকুড়া মেদিনীপুর জেলার এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল বিদ্রোহের ছাইচাপা আগুণ জ্বলতে থাকে ধিকি ধিকি
মেদিনীপুরেরে সেটলমেন্ট অফিসার, জে সি প্রাইস, তার নোটস অন দ্য হিস্টোরি আব মেদিনীপুরএ বলছেন পাইক বিদ্রোহ নিয়েও আলোচনা করছেন চোয়াড় সমাজগুলোর পাশাপাশি আর এক সমাজও এই বিদ্রোহে নিজেদের অত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত হয়, সেই সমাজটির নাম পাইক সমাজ মোগল আমলে পাইকদের কাজ ছিল সমাজে আরক্ষা ব্যবস্থা কায়েম করা এই কাজে তারা মোগলদের কাছ থেকে বিনা খাজনার জমি চাষের জন্য পেতেন সেই জমিও ইংরেজ গায়ের জোরে দখল নিতে শুরু করে মোগল সাম্রাজ্যের অবসানে এ ধরণের নানান প্রফেসনলসদে জীবনে অস্থিরতা নেমে আসে এদের জীবিকার নিশ্চয়তা না দিয়েই ইংরেজরা এসব গোষ্ঠীগুলিকে বাড়ন্ত ঘোষণা করেদিল এদের বহু বছরের কর্মের অপর আঘাত শুধুই এল না, এদের বদনে একশ্রেণীর আরক্ষাবাহিনীকে এদের কাজ করতে দিয়ে তাদের ব্যয় তোলার অজুহাতে এদের বংশপরম্পরায় অধিকৃত নানান সুযোগ সুবিধে কেড়ে নিতে শুরু করে পশুশক্তির সাহায্যে পাইকদের জমি থেকে উচ্ছেদ করে সেই জমি কয়েকজন বশংবদ জমিদারদের অধীনে রাজস্বের জন্য দিয়ে দেয় প্রাইস বলছেন এধরণের পঁচিশ হাজার পাইক পিতৃপুরুষের জমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয় জমিহারা বাস্তু হারা পঁচিশ হাজার পাইক, অসন্তোষের আগুনে ঝিকি ঝিকি জ্বলা চোয়াড়দের সঙ্গে যোগদিয়ে চোয়াড় বিদ্রোহের পরিবেশে ধোঁয়া দিয়ে একত্রে বিদ্রেহের অবস্থা ঘনিয়ে তুলল
এ সময় ইংরেজদের দাবিমত বিপুল পরিমান করের বোঝা বহু সনাতন জমিদার পরিবার মেনে নিতে পারে নি চিরাচরিতভাবে নবাবদের সঙ্গে যে ধরণের রাজস্ব প্রদানের শর্ত পূরণ করে এসেছেন এ ধরণের জমিদারেরা, সেই ধরণের শর্তের বাইরে না যেতে চাইলে কর্নওয়ালিশের নতুন ভূমিসত্ব আইন চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত অনুযায়ী এদের জমিদারি উচ্চমূল্যে নিলামে ওঠে এবং রাতারাতি এগুলি দখল হয়ে যেতে থাকে এই অঞ্চলের জমিদারেরা পাইক-চোয়াড়দের অসন্তোষের পারদ অরও বাড়িয়ে দিয়ে তাদের বিদ্রোহে যোগ দেয় এই জমিদারদের মধ্যে দুর্জন সিংহ অন্যতম, যিনি তার কাজকর্মে বিদ্রোহীদের শ্রদ্ধা অর্জন করে ওঠেন
সেসময় মেদিনীপুরের কালেক্টরও মিনহফ মন্তব্য করেন যে, ইংরেজ শাসনের অপরিমিত সম্পদ-লুন্ঠন ক্ষুধা এই বিদ্রোহের স্ফুলিঙ্গকে দাবানলে রূপান্তরিত করে দিত পেরেছিল তিনি সরাসরি বিচারক-ম্যাজিস্ট্রেট রবার্ট গ্রেগরিকে অভিশুক্ত করেন সে সময় লুঠেরা শাসকদের ঔদ্ধত্য দেখে বিতশ্রদ্ধ তিনি রেভিনিউ বোর্ডকে একটি চিঠি পাঠান এই চিঠিতে তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন কেন এ অঞ্চলে পাইক চোয়াড় বিদ্রোহ আজ প্রকাশ্যে এসে পড়ার যোগাড় হয়েছে অন্যদিকে প্রাইস বলছেন রাণী শিরোমণীর বিশাল রাজত্বে ব্যাপক হারে পাইকদের জায়গির জমি দখলের ফলে পাইকদের মনে অসন্তোষ দেখা দেয় ফলে বিক্ষুব্ধ পাইকেদের এক অংশ সরকারের ওপর আনুগত্য হারিয়ে ফেলে চোয়াড়দের সঙ্গে সরাসরি হাত মেলায় এরা যখন দেখল ভ্রাতৃপ্রতীম চোয়াড়দের জীবনে ইংরেজদের দখলদারি নেমে এসেছে, তখন এদের বুঝতে দেরি হয় নি যে আগামীদিন এদের জীবনে দুর্বিসহ হয়ে উঠতে চলেছে

মেদিনীপুরের চোয়াড় বিদ্রোহ২


মধ্যবিত্ত বাঙালির সাধের ও প্রাণের চলন্তিকা অভিধানে চোয়াড় শব্দটির অর্থটি পাই- বাংলা ভাষায় চোয়াড় শব্দটি হইল নীচ দুর্বৃত্ত মানুষ এবং এই শব্দটি দ্বারা বাঁকুড়া ও মানভূমের ভূমিজ আদিম অধিবাসীদিগকেই বুঝায় কিন্তু প্যান্ট শার্ট পরিহিত, শহুরে বাঙালি মধ্যবিত্তের ব্রিটিশ লাঞ্ছিত এনলাইটমেন্টের উত্তরাধিকার বহন করে চলা পরমজ্ঞাণী অভিধান লেখক মশাই, যাঁদের অসভ্য, নীচ অথবা দুর্বৃত্ত লব্জে চিহ্নিত করছেন, তিনি যে চোয়াড়দের বিদ্রোহের উত্তরাধিকার সম্বন্ধে অভিহিত নন এমন ভাবাই মুর্খতা আশা করা যায়না, যখন নানান সহজলভ্য ব্রিটিশ নথিতে তাঁদের বীরত্বের কাহিনী সহজেই মেলে তাহলে আদত পরিকল্পনা কী! বলাভাল মধ্যবিত্ত বাঙালি সমাজের প্রবাদপ্রতীম অভিধানকার যাঁদের ভাবনার পথ ধরে এই জনগোষ্ঠীদের তিনটি বাছা বাছা বিশেষণে দেগে দিচ্ছেন, তাঁরা এই আদতে এই অঞ্চলের আদিবাসিন্দা এবং তাঁদের অবিস্মরণীয় এবং পরাক্রান্ত অনমনীয় বিদ্রোহী প্রতিমায় ক্ষুব্ধ, ব্রিটিশ এবং ব্রিটিশ-নব্যজমিদারদের মদতপুষ্ট ইতেহাসকারাই এদের গালি দিয়েছেন চোয়াড় নামে বাঙালির জীবনের রাসায়নিকমশাই কিন্তু অনুসরণ করেছেন ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের অভিধাকে
বর্তমান ইতিহাসকারেরা বলেন চোয়াড় নির্দিষ্ট কোনো আদিবাসী সমাজ নয়, আদতে জঙ্গলমহলের এক ঝাঁক আদিবাসী সমাজকে মধ্যবিত্ত শাসক ইঙ্গ-বঙ্গ সমাজ ঘৃণাভারে চোয়াড় নামে সম্বোধন করত জঙ্গলমহলের স্বাধীনতাপ্রিয় সাঁওতাল, ভূমিজ, কুর্মি প্রভতি জাতির মানুষেরা ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিল তাই তাদের চোয়াড়অর্থাৎ অর্ধসভ্য, গোঁয়ার আখ্যা দিয়েছিল বিদেশি শাসকরাহাজার হাজার বছর ধরে এই স্বাধীণ সম্প্রদায়ের অর্জিত অধিকারের বিরুদ্ধে গিয়ে মোগল সাম্রাজ্যও এদের ওপর নির্যাতনের খাঁড়া নামিয়ে আনেনি
এই অঞ্চলের নানান আদিবাসী অরণ্যাচারী সমাজ অরণ্যসম্পদের ওপর নির্ভর করে তাদের নিজস্ব জীবনজীবিকা নির্বাহ করত কয়ের হাজার বছর ধরে নিজেদের সমাজে ভারতের সনাতন সমাজের গণতন্ত্রের নানান অধিকার সুক্ষিত করতে তাঁরা নিরন্তর সচেষ্ট ছিলেন ততকালীন শহুরে মানুষেরা তাদের অসভ্য, নীচ ইত্যাদি অভিধায় অভিহিত করলেও বা পরের দিকের অনেক সহানুভূতিশীল ইতিবাসকারেরাও এদের আদিম বলে অভিহিত করলেও আদতে আজকে প্রমাণিত এই সমাজগুলির জীবনযাত্রা কোনো অর্থেই আদিম সরল নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে মিলেমিশে থাকার আন্তরির সদিচ্ছা নিয়ে বহু দিনের পরীক্ষা নীরিক্ষার মাধ্যমে গণতন্ত্রক মাণ্যকরার, সামাজিক সাম্যের কাছাকাছি যাওয়ার প্রবণতা ফুটে উঠেছে

মেদিনীপুরের চোয়াড় বিদ্রোহ১


চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের ফলে দেশজুড়ে নেমে আসে হঠাত গজিয়ে ওঠা জমিদার আর নানান মধ্যসত্বভোগীর সংখ্যা
১)জমিদার - জমিদার শ্রেণী মধ্যসত্বভোগীদের ত্রিভূজের চূড়ায় এদের সঙ্গেই কেম্পানি সরকার রাজস্ব গ্রহন করে এরা সবথেকে প্রতাপশালী মধ্যসত্বভোগী অথচ জমির এপর সার্বভৌম অধিকার ছিল কিন্ত সরকারের ইরেজ শাসকই জমিদারদের নির্দিষ্ট রাজস্ব ঠিক করেদিত, নির্দিষ্ট সময়ে রাজস্ব দিতে না পারলে জমিদারি নিলাম করে দেওয়া হত সর্বোচ্চ দরে যে কোনো কেউ কিনে নিতে পারতেন এই দালালির কাজ করেই বহু মানুষ ধনী হয়েছেন
২)তালুকদার জমিদারের নিচে তালুকদারেরা এরা চার প্রকার ক) খারিজা, খ) বাজেয়াপ্তি এরা নিজের নামে আলাদা আলাদা কালেক্টরিতে খাজনা দিতে পারতেন, গ)সামিলাত ঘ) পত্তনি বা পাট্টাই- জমিদার নিজের নিজের এলাকাকে ভাগ করে ছোটছোট এলাকায় বেঁটে পাট্টার সাহায্যে বিলি করত তার নাম পত্তনি জমিদার উট্ঠেদ হলে পত্তনিদারও উচ্ছেদ হতেন সামিলাতে কিন্তু তা হত না
৩) জোদ্দার, গাঁতিদার, হাওলাদার প্রভৃতি তালুকদারের পরে অবস্থান জোতদারের অধীনে যারা জমা নিত তাদের বলাহত কারফা বা কোলজানা প্রজা যারা জোতদার গাঁতিদার খামার জমি চাষ করে মোট মজুরি বাবদ সাদারণতঃ মোট উতপন্নের অর্ধেক পেত তাদের বর্গ-জোতদার বা আধিয়ার বলত
৪) এবার মৌরসী মোকরররী মৌরসী অর্থ পুরুষানুক্রমিক আর মোকরররীর অর্থ খাজনার এক প্রকার হার সুতরাং তালুকদারিরমত এটিও বংশ পরম্পরায় ভোগদখল এরা পত্তনিদারেরমত মেয়াদি বা হস্তান্তরে অযোগ্য শর্তে জমি বিলি করতে পারত
৫) ইজারাদারেরা তালপকদার বা জমিদারদের কাছ থেকে বড় এক এলাকা নির্দষ্চ কালের জন্য বন্দোবস্ত নিয়ে পূর্ববর্তী মালিকদের স্বত্ব-সামিত্ব বা ভোগদখল বা হস্তান্তর করতে পারত দায়সূদী বা পাচানী ইজারাদার মালিকদের কিছু টাকা অগ্রিম বা ঋণ দিয়ে যে সুদে ঐ টাকা সুদে আসলে শোধ নাহত, সে পর্যন্ত ইজারার উপস্বত্ব ভোগ করত
৬) লাখেরাজ নিষ্কর সম্পত্তির মালিক এছাড়াও ছিল দেবোত্তর, ব্রহ্মোত্তর, ভোগোত্তর, মহাত্রাণ, চেরাগী, পীরোত্তর নানান ধর্মী কাজে এ ধরণের সম্পত্তি দেওয়া হত
৭) ওয়াকফ বা ট্রাস্টএর হাতে জনহিতর কাজ করার জন্য
৮) চাকরান বা পাইকান
১৭৯৮-৯৯সালে বাঁকুড়া, মেদিনীপুর জুড়ে এক বিরাট অঞ্চলে ব্যাপক বিদ্রোহ দেখা দেয়, ইতিহাসে যেটি চোয়াড় বিদ্রোহ নামে মুখ ঢেকে বসে আছে অন্যান্য বিদ্রোহেরমত এটির প্রচার কম, কেননা চোয়াড় শব্দটি মধ্যবিত্ত বাঙালির জগতে গালিরূপেই ব্যবহার হয়ে এসেছে সেই অবহেলিত, অভিধানে বর্ণিত দুর্বৃত্ত, অসভ্য, নীচ জাতি, অবজ্ঞাত মানুষগুলি ইংরেজ শাসনের বিরুদ্ধে বাংলার সাধারণ মানুষের বিদ্রোহের আকাঙ্খার কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করে বিপ্লবের বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন গ্রামের পর গ্রাম এই বিদ্রোহকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পথানুগামী ঐতিহাসিকেরা তাঁদের লেখা ইতিহাসে স্থান দেননি বাঙালি মধ্যবিত্তের শহুরে ঔপনিবেশিক ভাষার মারপ্যাঁচের খামখেয়ালিপনায়, অসভ্যতার দাগে দাগি এই সনাতন জনসমাজ, লুঠেরা বণিক-শাসকদের বিরুদ্ধে যে পরাক্রামে লড়াই করেছিল, সেই প্রচেষ্টা সমকালীন ইতিহাসে স্থান না হলেও স্থানীয় লব্জে আর কিছু সমকালীন নথিপত্রে অবিস্মরণীয় হয়ে রয়েছে এই বিদ্রোহের অমর কাহিনী আজও নানান ঐতিহাসিক লড়াইএর আত্মনিবেদনে নিবেদিত মানুষের প্রেরণা

Saturday, May 21, 2011

বারাঠাকুরের জাতাল উত্সব

(পরিপার্শ্ব পার্ষদ পীর গোরাচাঁদ পুস্তক থেকে)
...বারাঠাকুরের পূজানুষ্ঠান জাতালের মধ্যেও আদিম সভ্যতার বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়. জাতাল পুজা হয় বনাঞ্চলে নিশীথকালে. বনের মধ্যে মাঠে প্রয়োজনমত জায়গা পরিষ্কার করে মাটির বেদী নির্মাণ করা হয়. খেজুর শাখায় সেই বেদী বেষ্টন করা হয়. বেদীর ওপর দুটি বারামূর্তি থাকে যার একটি পুরুষ অন্যটি নারী. কাছাকাছি কোন গাছের ওপর লাল পতাকা উড়িয়ে দেওয়া হয়. গভীর রাত্রে মশাল জ্বালিয়ে ঢাকঢোল বাজেয়ে মদ-মাংস-গাঁজা নৈবেদ্য দিয়ে, সেই বারা মূর্তি পূজা করা হয়. পূজায় কাঁস-পাঁঠা-মুরগী প্রভৃতি বলি দেওয়া হয়. বলিদেওয়া পশু পাখির রক্তে প্রাঙ্গণ ভেসে যায়. নেশায় মশগুল ভক্তরা কপালে রক্তের তিলক পরে মশাল হাতে নৃত্য করতে থাকে. কেউ কেু অশ্লীল অঙ্গভঙ্গী করে উক্তি-প্রত্যুক্তি করে. পূজা চলার সময় উত্কট চিতকার এবং প্রচন্ড বাজলার আওয়াজে কান ফেটে যাওয়ার উপক্রম হয়. জাতালে অশ্লীলতা যৌন শিথিলতা উতকট চিত্কার ইত্যাদি অবশ্য পালনীয় প্রথা. একটি লৌকিক ছড়ায় জাতালের বৈশিষ্ট্য ভারি সুন্দর ফুটে উঠেছে - জাতালে মাতাল কান্ড খুনোখুনি সারা/মদ-মাগী রক্ত-মাংস সামাল সামাল বারা.
দক্ষিণ রায়ের বারামূর্তি পূজায় ক্ষেত্র বিশেষে অনেকগুলি মুণ্ডমুর্তি পূজা হলেও সকাধারণ যুগ্মমূর্তির পূজাই হয়ে থাকে - যার একটি গোঁফযুক্ত পুরুষ, অপরটি নারী. অনেক ক্ষেত্রে, একক পুরুষমূর্তির পাশে জলঘটকে নারীমূর্তি কল্পনা করেও পূজা করা হয়. বারামূর্তি পূজা বাড়িতে হয় না- হয় বনে, বৃক্ষশাখে, বৃক্ষতলে বা নদীতীরে বা পানের বরোজে কিম্বা গ্রামের সীমান্তে. প্রায় সর্বত্র বারামূর্তির পাশে মনসা গাছ দেখা যায়. আদিমস্যতার সঙ্গে মনসার গাছের যোগ নিবিড়. বর্ণ হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় বারা ঠাকুরের পূজা করেন. ব্রাহ্মণ পুরোহিত, অন্যত্র শাস্ত্রমন্ত্রহীন লোকায়ত ভঙ্গিতে এঁর পূজা হয় গ্রাম বা সমাজগতভাবে.

দক্ষিণরায় এবং তাঁর বারামূর্তি

(বীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যেরপরিপার্শ্ব পার্ষদ পীর গোরাচাঁদ পুস্তক থেকে )

...লোকদেবতা দক্ষিণ রায় এবং তাঁর বারামূর্তিকে স্বীকার না করলেও কালক্রমে দক্ষিণবঙ্গের ব্রাহ্মণেরা কিন্তু দক্ষিণেশ্বর নামে তাঁকে মেনে নিয়েছেন. কোনো প্রামাণ্য শাস্ত্রে যদিও এ দেবতার পুজার বিধান নেই, তবু নিজেদেরই উদ্ভাবিত মন্ত্রে তাঁরা এই দেবতার পুজো করেন. সে মন্ত্র তাণরা সাধারণ্যে প্রকাশ করেন না. কেউবলেন তিনি সাক্ষাত ক্ষেত্রপাল শিব, কেউবা বলেন তিনি গণেশ. কাহিনীও সেভাবেই তৈরি হয়ে যায়. গণেশের জন্মের পর শণির কোপদৃষ্টিতে মুণ্ড উড়ে যায়- গণেশের সেই কাটা মুণ্ডই দক্ষিণ রায়ের রাবা মূর্তি.
ব্রহ্মণ্য সংস্কৃতি্র প্রচণ্ড বাধা সত্বেও লৌকিক দেবদেবী যখন আপন মাহাত্ম্যে সাধারণ মানুষের কাছে পুজো পান, তখন উচ্চবর্ণের হিন্দুরা নিজেদের গরজেই সেইসব দেবদেবীকে শাস্ত্রে অনুমোদন দিয়ে থাকেন. কখনও বা স্বনামে কখনও বা বেনামে এই সব লৌকিক দেবদেবী বৃহত্তর হিন্দু সমাজে স্বীকৃত হন. মধ্যযুগের শীতলা, মনসা ইত্যাদি লৌকিক দেবদেবীরা এভাবেই স্বীকৃতি আদায়র করে নেন, ধর্মঠাকুর শিব ঠাকুর রূপে পুজিত হন. এইসব দেবদেবীর গুণকার্তনে মঙ্গল কাব্য রচিত হয়. কাটা মুন্ড বারা ঠাকুরের দক্ষিণ রায়ের পূর্ণ মূর্তিতে পূজা পাওয়া আসলে শাস্ত্রের দ্বারা অনুমোদন - গণেশের নামে, শিবের ক্ষেত্রপাল নামে কিম্বা অন্য কোন নামে. রায়মঙ্গল কাব্যখানি রচিত হয় দক্ষিণ রায়ের গুণকীর্তনে.
উগ্রদর্শণ বারামূর্তির প্রকরণে আদিমতা সহজেই ধরা পড়ে. কান্ডহীন মুণ্ডটি কাটা নৃমুণ্ডের প্রতীক- আদিম সমাজে নরমুন্ড শিকারের স্মৃতি জাগিয়ে তোলে. আদিম জাদুবিশ্বাসে নরমুন্ডের এক বিশেষ ভূমিকা ছিল. কালক্রমে নরমুন্ডের বদলে তার প্রতীক ব্যবহার করা হয়. সারা বিশ্বের আদিমসমাজেরই এই রীতি. আমাদের দেশেও নাগা ও খোন্দ উপজাতিদের মধ্যে যে কাঠের নরমুণ্ড বা মুখোশের ব্যবহার তার মূলে ঐ জাদুবিশ্বাসই কাজ করে.
দক্ষিণ রায়ের বারামূর্তিও বস্তুত আদিম সমাজের সেইঈ নরমুণ্ডের প্রতীক. রায়মঙ্গল কাব্য বিপরীত উপাখ্যান শেনালেও বারামূর্তি দক্ষিণ রায়ের আদিরূপ. জঙ্গল হাসিলের সময়, বাঘের উত্পাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ভক্তের চোখে বারামূর্তি  ব্যাঘ্ররূপ, তার থেকে পূর্ণাকৃতি দক্ষিণরায়ের আসীন হওয়া ইসলামী প্রভাবে বড় খাঁ গাজীর প্রতিদ্বন্দ্বীরূপে.
বারামূর্তির প্রাচীণত্বের পাথুরে প্রমাণ আছে. ডায়মন্ডহারবার মহকুমার হরিনারায়ণপুরে উত্খননের ফলে নব্যপ্রস্তর যুগের অস্ত্র শস্ত্র প্রাপ্তির সঙ্গে মুণ্ডমুর্তি প্রাপ্তির কথা এই প্রসঙ্গে স্মরণীয়. শিল্প বিচারে এ মুন্ডমুর্তি লোকসমাজে প্রচলিত বারামূর্তিরই আদিরূপ বলে মনে হয়.

Thursday, May 19, 2011

Operation of Inoculation of the Smallpox as Performed in Bengall


(From Ro Coult to Dr Oliver Coult in ‘An account of the dis­eases of Bengall’ (Calcutta, dated February 10, 1731))
বাংলার এক অঞ্চলে স্মলপক্সএর টিকে দেওয়ার বর্ণনা আমরা পেয়েছি, ধরমপালএর রচনা সংগ্রহের প্রথম খন্ড থেকে
Here follows one account of the operation of inoculation of the smallpox as performed here in Bengall taken from the concurring accounts of several Bhamans and physicians of this part of India
The operation of inoculation called by the natives tikah has been known in the kingdom of Bengall as near as I can learn, about 150 years and according to the Bhamanian records was first performed by one Dununtary, a physician of Champanager, a small town by the side of the Ganges about half way to Cossimbazar whose memory is now holden in great esteem as being thought the author of this operation, which secret, say they, he had immediately of God in a dream
Their method of performing this operation is by taking a little of the pus (when the smallpox are come to maturity and are of a good kind) and dipping these in the point of a pretty large sharp needle Therewith make severall punctures in the hollow under the deltoid muscle or sometimes in the forehead, after which they cover the part with a little paste made of boiled rice
When they want the operation of the inoculated matter to be quick they give the patient a small bolus made of a little of the pus, and boiled rice immediately after the operation which is repeated the two following days at noon
The place where the punctures were made commonly festures and comes to a small supporation, and if not the operation has no effect and the person is still liable to have the smallpox but on the contrary if the punctures do supporate and no feaver or erup­tion insues, then they are no longer subject to the infection
The punctures blacken and dry up with the other pustules
The feaver insues later or sooner, according to the age and strength of the person inoculated, but commonly the third or fourth days They keep the patient under the coolest regimen they can think off before the feaver comes on and frequently use cold bathing
If the eruption is suppressed they also use frequent cold bath­ing At the same time they give warm medicine inwardly, but if they prove of the confluent kind, they use no cold bathing, but (keep) the patient very cooll and give coolling medicine
I cannot say any thing of the success of this operation or of their method of cure in this disease, but I intend to inform myself perfectly when the time of this distemper returns which is in April and May 
(From Dharampal • Collected Writings, Volume I, Indian Science and Technology  in the Eighteenth Century)