কড়ুই
বাখারির চাটাই দিয়ে মাটির মেঝে করে(বর্তমানে সিমেন্টের মেঝে) কড়ুই তৈরি হয়. সাধারণতঃ ঘরামিরাই এধরনের পরিকাঠামো তৈরি করেন. কাঠামো তৈরি পর জনে ভিজিয়ে রাখা হয়. তারপর শুকিয়ে আলকাতরা মাখানো হয় দীর্ঘ সময়ে বাঁচিয়ে রাখার জন্য. উল্টো শঙ্কুআকৃতির হয় কড়ুই. ধান ঢালার জন্য ওপরে বড় দ্বার আর নিচে ধান বের করার জন্য ছোট দ্বার তৈরি হয়. কড়ুএএর ভিতরের দিকে মাটি, খড়েরকুচি, আর গোবর জলে গুলে প্রলেপ দেওয়া হয়. এই প্রলেপের জন্য কড়ুইতে অতিরিক্ত হাওয়া ঢুকতে পারে না. কড়ুইএর ছাদ মরাইএরমতই ছাওয়া হয়. ছোট থেকে বড় নানান আকৃতির কড়়ুই হয়. ৩০ থেকে ২৫০ মন পর্যন্ত ধান এই আধারে রাখা যায়. সাত থেকে ১০ হাত পর্যন্ত এইগুলি উঁচু হয়. মাঝেমধ্যে দেওয়ালে আলকাতরা লাগিয়ে আর মেঝেতে গোবরের প্রলেপ নিকিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়.
ডোল
অনেকগুলি চটের বস্তা পরপর সেলাই করে জুড়ে বড়সড় ব্যাগের আকার দেওয়া হয়. একেই ডোল বলে. এর মধ্যে ধান রাখা হয়. খড় মাটিতে বিছিয়ে তার ওপর সেলাইকরা ডোল রেখে তার ওপর দিয়ে ধান ঢালা হয় এবং এমন এক যায়গায় রাখা হয়, যাতে মাথার ওপর ছাউনি থাকে. বন্যাকবলিত এলাকায় প্রয়োজনে ধানের বস্তাগুলোকে সহজেই চালে ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা হল ডোল.
বাঁদি
নানান আদিবাসী অঞ্চলের ধান রাখার পাত্র বাঁদি. খড় দিয়ে কোকুনেরমত আধার তৈরি করা হয় তার নাম বাঁদি. আড়াই থেকে তিন ফিট আকারের এই বাঁদি হয়. বর দিয়েই জড়িয়ে এই বাঁদি তৈরি করা হয়. দু থেকে তিন মনেরমত ধান এই বাঁদিতে রাখা হয়. ঘরের উঁচু স্থানে বাঁদিগুলি মাচা বেঁধে রাখা হয়. কোড়া, সাঁওতাল সমাজ এই ধরনের আধারে ধান রাখেন.
ধান্যগলি
হুগলির আরামবাগ অঞ্চলে মাটির বাড়ি তৈরির সময় দেওয়ালের মধ্যে কলাগাছের কান্ডেরমত পচনশীল সামগ্রী রেখে দেওয়াল তৈরি হয়ে গেলে দেওয়ালে ভেতরে খাঁকা অঞ্চল গলিরমত দেখতে হয়. তাই এই নাম গলি, আর ধান রাখা হয় বলে এর নাম ধান্যগলি. দুতিন তলা মাটির বাড়ি হলে এই এই গলিপথ বেশ বড় হয়. ওপর থেকে ধান ঢেলে নিচে ধান বের করানোর স্থানটি কপাট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়. প্রয়োজনে কপাট খুলে ধান বের করা হয়.