বাঙলার একমাত্র লৌকিক কারিগর, বস্ত্র এবং
অভিকর(পারফর্মিং আর্টিস্ট) শিল্পীদের একমাত্র সংগঠণ বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও
বস্ত্র শিল্পী সংঘ এবং বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সংঘের প্রথম সম্মেলন
অনুষ্ঠিত হল কোচবিহার শহরের লঙ্কাবর অঞ্চলের লঙ্কাবর গুণেশ্বর ক্লাব প্রাঙ্গণে, ৪
সেপ্টেম্বর, ২০১২, ১৮ ভাদ্র, ১৪১৯ সকাল ১০টায়. লঙ্কাবর পিলখানা স্পেশাল ক্যাডার
প্রাইমারী স্কুলে সংগঠণের এই সম্মেলন আয়োজন হওয়ার কথা থাকলেও অনিবার্য কারনে এই
সম্মেলনটি আয়োজিত হল গ্রামেরই এই ক্লাব প্রাঙ্গণে. উপস্থিত ছিলেন, জলপাইগুড়ির বিধায়ক
সুখবিলাস বর্মামহাশয়, স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপ-প্রধাণ বিমল বর্মণমহাশয়সহ আরও অনেক
ব্যক্তি, উদ্বোধন করলেন প্রবীণ তন্তুবায় খগেন্দ্রনাথ বর্মণমহাশয়. এছাড়াও উপস্থিত
ছিলেন সংগঠণের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিবৃন্দ. এছাড়ও উপস্থিত ছিলেন সংঘের
কেন্দ্রিয় সদস্য মধুমঙ্গল মালাকার, বিশ্বেন্দু নন্দ এবং নারায়ণ পৈত. এই সম্মেলনে
উপস্থিত হয়ে জলপাইগুড়ির বিধায়ক ও বিশিষ্ট ভাওয়াইয়া গায়ক এবং ড. সুখবিলাস বর্মা
সংগঠণদুটিকে শুভেচ্ছা জানান, এবং আগামীদিনে এই সংগঠণের রূপরেখা বর্ণনা করেন.
এই প্রথম রাজ্যের লৌকিক, পারম্পরিক কারিগগর,
বস্ত্রবয়ন ও অভিকর শিল্পীরা একজোট হয়ে নিজেদের নানান সমস্যার সমাধানে উদ্যোগী
হয়েছেন. এই সম্মেলনটি আয়োজন করছেন সংঘের কোচবিহার শাখা. বিগত বছরে পঞ্জীকৃত হওয়া,
এই দুটি সংগঠণের শাখা ছড়িয়েছে অন্ততঃ ১৪টি জেলায়. প্রত্যেক জেলা থেকে শিল্পীরা এই
উত্তরবঙ্গ সম্মেলনের কোচবিহার সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করতে আসছেন. এছাড়াও নানান
ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠণের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকেছেন এই সম্মেলনে.
বিগত এক বছর ধরে শুধুই সদস্যদের চাঁদা
নির্ভরকরে এই সংগঠঠন বেড়ে উঠেছে বিশালভাবে, যার প্রতিফলন ঘটেছে সংগঠণদুটির
উত্তরবঙ্গ সম্মেলনে বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে. বিগত ১০-২০মে সংগঠণ কলাবতী
মুদ্রা, ব্রতচারী সংগঠণ এবং গুরুসদয় সংগ্রহশালার সঙ্গে মিলে ১১ দিনের একটি
উত্তরবঙ্গ উত্সবের আয়োজন করেছিল কোনও দাতা সংগঠণ, বিজ্ঞাপণ এবং সরকারি সাহায্য
ছাড়াও. মেলায় দিনাজপুরের শোলা শিল্পী মধুমঙ্গল মালাকারের পারম্পরিক শেলা শিল্পের
প্রদর্শণী হয়. মেলায় সারা বাঙলা থেকে প্রায় ৩৫ জনেরও বেশি শিল্পী এই মেলায়
অংশগ্রহণ করে.
এই সম্মেলন উদ্বোধন করে জলপাইগুড়ির বিধায়ক
সুখবিলাস বর্মা বলেন, এই সম্মেলনে উত্থাপিত নানা দাবি দাওয়া তিনি বিধানসভায় পৌঁছে
দেওয়ার চিষ্টা করবেন. তিনি বলেন এই প্রথম বাঙলায় এই সবকটি গ্রামশিল্পের শিল্পীদের
নিয়ে সংগঠণ গড়ে উঠছে. তিনি খুব খুশি. এবং প্রধান দুই উদ্যোক্তা বিশ্বেন্দু নন্দ
এবং মধুমঙ্গল মালাকারকে তিনি বহু কাল থেকেই চেনেন. তিনি এদের কাজকর্মের উত্সাহ
দেখে এদের পাশে দাঁড়াবার প্রতিজ্ঞা করছেন. সম্মেলনে বুদ্ধিজীবি সাংবাদিক দেবব্রত
চাকী, স্থনীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধাণ বিমল বর্মণ বক্তৃতা করেন.
এই দুটি সংগঠণ কোচবিহারে সম্মেলনের আয়োজনের
নেতৃত্ব দান করছেন কোচবিহার শাখর সম্পাদক বাঁশ ও বেত শিল্পী, গৈরাঙ্গ বর্মণ এবং
লঙ্কাবর এলাকার মহিলা পাটশিল্পীদের দল. পনের বছর আগে গৌরাঙ্গ বর্মণ এই অঞ্চলের
মহিলাদের নিয়ে পাট ও বাঁশের প্রশিক্ষণ করেন এবং আজ প্রায় ৫০টিরও বেশি পরিবারের
ভরণপোষণ হয় এই প্রশিক্ষণ
কর্মে. সেই মহিলারাই গৌরাঙ্গ বর্মণের নেতৃত্বে বঙ্গীয় পারম্পরিক কারু ও বস্ত্র
শিল্পী সংঘ এবং বঙ্গীয় পারম্পরিক অভিকর শিল্পী সংঘের প্রথম উত্তরবঙ্গ সম্মেলন
আয়োজন করেছেন নিজেদের উদ্যোগেই. আজ এই মহিলারা নিজেরাই সংগঠিত হয়ে সংঘের উদ্যোগে
নতুন করে বাঁচতে চাইছেন, নতুন করে নব দিশার পানে যেতে চাইছেন. কেননা এই প্রথম
বাঙলায় একটি সংগঠণ তৈরি হয়েছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বয়ং পারম্পরিক শিল্পীরা. এতদিন
বাঙলায় যে সব সংগঠণ লৌকিক শিল্পীদের কাজ করেছেন, সেই সব সংগঠণে নেতৃত্বে ছিলেন
অ-পারম্পরিক শিল্পীরা. তাই আজ এই সংগঠণ নতুন করে পারম্পরিক শিল্পীদের বাঁচার সুযোগ
করে দিচ্ছে.
এই সংগঠণে সমগ্র উত্তরবঙ্গের জেগুলোর
প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন. এবং তাঁরা আগামী দিনে এই সংগঠণ, শিল্প, শিল্পীদের নানান
ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন এবং এই ইস্যুগুলোকে কীভাবে মোকাবিলা করা যায় সে বিষয়েও
বিশদে বলেন.
সম্মেলন আগামীদিনে সংগঠণকে আরও ছড়িয়েদেওয়ার
আহ্বান জানিয়ে শেষ হয়.