ছাওয়ার জান
মিঞার খড়ো ঘর, পোঃ মধুখালি, গ্রাম বনমালদিয়া, জেলা ফরিদপুর। এই ঘরখানি
প্রথমে ওস্তাদ রাজলোচন ঘরামী প্রস্তুত করিতে উদ্যত হইয়া শেষে ভয় পাইয়া মিঞার নিকট
অস্বীকার করে। কিন্তু
তাহার এক আনাড়ী সাগরেত্ মহিম নমঃশূদ্র এই ঘর অতি প্রশংসা ও গৌরবের সহিত সমাধা করে। ইহা প্রস্তুত
করিতে প্রায় একশত বত্সর পূর্ব্বে ১২,০০০টাকা খরচ পড়িয়াছিল। পূর্ব্বে এই
ঘরে একটিমাত্র আলো জ্বালাইলে সমস্ত ঘরখানি মিনাপাত এবং অভ্রে প্রতিবিম্বিত হইয়া আলোকিত
হইত। কিন্তু
বর্ত্তমানে মিনাপাত একেবারেই নাই, অভ্র কিছু আছে। যে ঘরামী দিনে
একটিমাত্র রুয়ো প্রস্তুত করিতে পারিত সে চাকুরী পাইয়াছে, এবং মহিম নাকী প্রতিটি
জিনেষরই পরীক্ষা করিবার জন্য জিনিষগুলির উপর দিয়া একগাছি রেশমী সুতো টানিয়া লইয়া
যাইত, যদি সুতোটি ছিঁড়িয়া যাইত তবে বুঝা যাইত যে জিনিষ ভালভাবে মসৃণ হয় নাই। পূর্ব্বেই
উক্ত হইয়াছে, এই চিত্রবিচিত্র সর্ব্বাঙ্গসুন্দর শিল্পীর তপস্যার ফলস্বরূপ ঘর খানি
দেখিলেই অজন্তার কারিগরদিগের কথা মনে পড়িবে। সে সার্ব্বভৌম
রাজচক্রবর্ত্তীরা আর নাই, সুতরাং পাথরের সেই বিরাট স্বপ্ন গড়িবার পরিকল্পনা কে
করিবে! কিন্তু তথাকার কারিগরের বংশধরেরা যে সেই অপূর্ব্ব শিল্প তাঁহাদের দীন
দরিদ্র উপকরণ লইয়া এইরূপ শ্রদ্ধা ভক্তি ও তপস্যার অর্ঘ্যে সাজাইয়াছে, তাহাতে কে
সন্দেহ করিবে! ধন্য সেই শিল্পীকুল তাহারা নাম যশ অর্থ চাহে নাই কিন্তু বহু কষ্ট,
দারিদ্র্য ও অভাব উপেক্ষা করিয়া যুগ যুগান্তরের তপস্যার ফল লইয়া আসিয়া আমাদিগকে
দিয়াছে। যদি
তাহারা অর্থ কি প্রতিষ্ঠা চাহিত, তবে এ তপস্যার ফল দেশের দুর্দ্দিনে আমরা পাইতাম
না। শিল্প
ছিল তাহাদের হোমকুণ্ড, অনাহারে, অর্দ্ধনগ্নদেহে এই অহিতাগ্নিগণ সেই হোমানল
জ্বালাইয়া রাখিয়াছে। আমরা
মূঢ়, দুপাতা ইংরেজী শিখিয়া ইহাদিগকে ঘৃণা করিতেছি, কলাকক্ষ্মী মুখ ফিরইয়া একটু
অশ্রু মুছিতেছেন।
No comments:
Post a Comment