জলের সঙ্গ পাওয়ার আশার উত্তবঙ্গের একটি ব্রতের নাম হুদুমদেও ব্রত। কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দিনাজপুর জেলায় এই ব্রত নিষ্ঠাসহকারে পালিত হয়। হুদুম আর্থে উদুম বা উলঙ্গ। প্রচণ্ড খরা থেকে রেহাই পেতে জলের দেবতা বরুনদেবকে তুষ্ট করতে নানান দৈহিক আচার উপাচার প্রদর্শণ করে থাকেন মহিলারা। যদিও ব্রত সাধারণতঃ মহিলামহলেরই কর্মকাণ্ড, কিন্তু প্রায় সব ব্রতে পুরুষের অক্রিয় সহযোগিতা থাকে। কিন্তু হুদুমদেও ব্রতে সেটুকুও প্রবেশাধিকার নেই। তাই এই ব্রত ঘিরে নানান লোককাহিনী গড়ে উঠেছে। সঠিক তথ্য পাওয়া আজও দুষ্কর। অংশগ্রহণকারী মহিলাদের বয়স নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে গবেষক মহলে। কারোরমতে এই ব্রত বর্ষীয়সী মহিলাদের অংশগ্রহণে জেগে ওঠে আবার কারোরমতে এটিতে অংশ গ্রহণ করেন কুমারী আর আবিবাহিতরাই। এই ব্রতের নাচের মধ্যে যে যৌনক্রিয়ার অভিব্যক্তি ফুটেওঠে সেবিষয়ে কিন্তু গবেষক মহলে কোনো দ্বিমত নেই - শিশির মজুমদারের জবানে শুনেছি এই ব্রতপালনে মহিলারা সারিবদ্ধ হয়ে ঘড়া ঘড়া জল নিয়ে উলঙ্গ হয়ে ঘুরে ঘুরে নাচেন। হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মহিলারাই এই ব্রতে অংশগ্রহণ করেন। রাজবংশী ভূমিপুত্র সুখবিলাস বর্মা বলছেন বাল্যবয়সে তিনি তাঁর দিদিমার সঙ্গি হন এই নাচে টিন বাজাতে। তাঁর ভাওয়াইয়া গ্রন্থে হুদুমদেওর বেশকিছু গান সংকলিত হয়েছে। আমি কচুর লতারমত হেলিব না, অল্পবয়লের হুদুমদ্যাও। আরে আয় আয় রে কালা ম্যাঘ আয় পর্বত ধায়য়া। ও মুই মাথা ঘসিয়া রে, আঙছ না চায়য়া রে। অথবা হিলঙি্হাল্যাছে কমোরটা মোর শিরশিরাচ্ছে গাও কোনটে কেনা গেইলে এ্যালা মুই হুদুম নাগাল পাও, পাটনি খান পড়োছে খসিয়া, আইসরে হুদুম দেওয়া তোর বাদে মুই আছোং বসিয়া। বা মুসলিম সমাজের আর্তি এক ঝোরা পানি দে আল্লা ঘরে চল্যে যাই।
No comments:
Post a Comment