উত্তরবঙ্গের লোকজীবনে তিস্তা নদীর প্রভাব বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ করে জলপাইগুড়ি জেলায় – কখোনো সে দুকুল ভাসায় কখোনো আবার সবুজে সবুজে ভরে দিয়ে সভ্যতার বিকাশের সঙ্গী হয়ে ওঠে। উত্তরবঙ্গে তাই তিস্তার বড় আদর – তাকে সোহাগে রাখার, তাকে আদরে রাখার। তিস্তাকে তাই আদর করে সম্বোধন করা হয় বুড়ি নামসহযোগে। উত্তরবঙ্গীয়রা তাই তিস্তাবুড়ির খ্যাপামি নিয়ে ছড়া কাটে, গান বাঁধে, ঘটা করে পুজো দেয়। তিস্তাবুড়ির এই ব্রত স্থানীয় ভাষায় বরত্ রূপে চিহ্নিত। এই গানের সঙ্গে নাচেন কিশোরীরা। একে বলে মেচেনি বা মেছুনিখেলি। বেত বা বাঁশএর একটি ছোট ঝাঁপি লাল কাপড়ে মোড়া – তার মধ্যে তেল সিঁদুর মাখানো একটি ফুলদিয়ে সাজানো ঘট বসানো। এটি তিস্তা মাই(মাও)এর প্রতীক। একে বড় ছাতা দিয়ে খরবৈশাখের প্রখর রোদ্দুর থেকে আড়াল করে বাড়ি বাড়ি ঘুরে চলে এ নাচ। বয়স্কারা তাঁদের ঘিরে তালি দিয়ে তাল রাখেন। করতালও বাজে। মেয়েরা খাটো শাড়ি পরে তাতেই ঊর্ধাঙ্গ জড়িয়ে কোমর বাঁকিয়ে বাঁকিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচে। সামনের দিকে ঝুঁকে দুই হাতে শাড়ির আঁচল, স্থানীয় লব্জে ফোতা বা পাটানি, মাটিতে ছুঁইয়ে দেয়। আবার সোজা হয়ে উঠে হাতে তালি দেয়। এক তাই থাপুনি(তালি) নাচ বলে। নাচটিকে বলে নাচানিয়া। এচটি গানের কলি – বড় বাড়িখন দেখিয়া আইলম লখমীমাও। বড় পিড়াখন পাতিয়া দাও। লখমী মাওক আমার সিন্দুর দেয় হে। সিন্দুর না থাকে যদি ইট ভাঙিয়া দাও হে। অথবা তিস্তাবুড়ির নামান গেহেচে আনন্দে বরিয়া নেওগে বড়য় হাউসালি, হামার পঞ্চ বাহিনী।
No comments:
Post a Comment