হাতি
এই
যে হাতী ধরা হাতী পোষ মানানো, তাহার চিকিত্সা, তাহার সেবা, যুদ্ধের জন্য তাহাকে
তৈয়ার করা –
এসব কোথায় হইয়াছিল! এই প্রশ্নের এক উত্তর আছে. আমরা এখন যে দেশে বাস করি, যাহা
আমাদের মাতৃভূমি, সেই বঙ্গদেশই এই প্রকাণ্ড জন্তুকে বশ করিতে প্রাথমিক শিক্ষা দেয়.
এ দেশের একদিকে হিমালয়, একদিকে লৌহিত্য ও একদিকে সাগর –
সেই দেশেই হস্তিবিদ্যার প্রথম উত্পত্তি. সেই দেশেরই এমন এক মহাপুরুষের আবির্ভাব
হয়, যিনি বাল্যকাল হইতেই হাতীর সঙ্গে বেড়াইতেন, হাতীর সঙ্গে খাইতেন, হাতীর সঙ্গে
থাকিতেন, হাতীর সেবা করিতেন, হাতীর পীড়া হইলে চিকিত্সা করিতেন, এমন কী একরকম
হাতীই হইয়া গিয়াছিলেন. হাতিরা যেখানে যাইত তিনিও সেখানে যাইতেন. কোনও দিন পাহাড়ের
চূড়া, কোনও দিন নদীর চড়ায়, কেন দিন নিবিড় জঙ্গলের মধ্যে, হাতীর সঙ্গেই তাহার
বাস ছিল. ...অঙ্গদেশের রাজা লোমপাদ বঙ্গবাসীর সুপরিচিত. তিনি রাজা দশরথের জামাই
ছিলেন. তাঁহার একবার শখ হইল হাতী আমার বাহন হইবে. ইন্দ্র স্বর্গে যেমন হাতী চড়িয়া
বেড়ান, আমিও তেমনি হাতীর উপর চড়িয়া বেড়াইব.
কিন্তু হাতী কেমন করিয়া বশ করিতে হয় তিনি জানিতেন না. তিনি সমস্ত ঋষিদের
নিমন্ত্রণ করিলেন. ঋষিরা পরামর্শ করিয়া কোথায় হাতীর দল আছে, খোঁজ করিবার জন্য অনেক
লোক পাঠাইয়া দিলেন. তাহারা এক প্রকাণ্ড আশ্রমে উপস্থিত হইল. সে আশ্রম
শৈলরাজাশ্রিত, পুণ্য এবং সেখানে লৌহিত্য সাগরাভিমুখে বহিয়া যাইতেছে. সেখানে তাহারা
অনেক হাতী দেখিতে পাইল, দেখিয়াই বুঝিল যে, এই মুনিই হাতীর দল রক্ষা করেন. ...রাজা
সসৈন্যে সেই আশ্রমে উপস্থিত হইয়া ... হাতি তাড়াইয়া লইয়া ... ঋষিদের পরামর্শমত হাতিশালা তৈরি করিয়া সেখানে হাতিদের বাঁধিয়া রাখিয়া ও খাবার দিয়া নগরে প্রবেশ করিলেন.
ঋষি...চম্পানগরে আসিয়া দেখিলেন যে তাহার হস্তিগুলি সব রোগা হইয়া গিয়াছে...নানারূপ
রোগের সৃষ্টি হইয়াছে. শেষে অনেক সাধ্যসাধনার পর মুনি আপনার পরিচয় দিলেন. তিনি
বলিলেন হিমালয়ের নিকটে যেখানে লৌহিত্য নদ সাগরাভিমুখে যাইতেছে, যেখানে সামগায়ন
নামে এক মুনি ছিলেন. তাঁহারই ঔরসে ও এক করেণুর গর্ভে আমার জন্ম. আমার নাম
পালকাপ্য. আমি হাতিদের পালন করি, তাই আমার নাম পাল, আর কাপ্য গোত্রের আমার জন্ম, সেই জন্য আমার নাম কাপ্য. লোকে আমাকে
পালকাপ্য বলে. আমি হস্তিচিকিত্সায় বেশ নিপুণ হইয়াছি. ..তিনি হস্তীর
আয়ুর্বেদশাস্ত্র ব্যখ্যা করিলেন. তাহার শাস্ত্রের নাম হস্ত্যায়ুর্বেদ বা পালকাপ্য.
...তাহাতে ক্রিয়াপদ নাই. ...যদিও
অঙ্গরাজ্যে চম্পানগরেতাঁহার আয়ুর্বেদ লেখা ও প্রচার হয়, তিনি আসলে বাংলাদেশেরই
লোক. পালকাপ্য পড়িতে পড়িতে অনেক স্থানে মনে হয় যেন, উহা অন্য কেন ভাষা হইতে
সংস্কৃতে তর্জমা করা হইয়াছে, অনেক সময় মনে হয় উহা সংস্কৃত ব্যকরণের মতে চলিতেছে
না. ...কালিদাস ইহাকে অতি প্রাচীণ কাব্য বলিয়া গিয়েছেন. ...কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
হস্তিপ্রচার অধ্যায়ে হস্তিচিকিতসার কথা আছে.
No comments:
Post a Comment