Tuesday, April 12, 2011

ঢেঁকি

বাংলায় জনপ্রিয় প্রবাদ ঢেঁকি স্বার্গে গেলেও ধান ভানে. সেই ঢেঁকি নিয়েই আজকের আলেচনা. বাংলায় ঢেঁকি শব্দটিকে ব্যবহার করে অকর্মা অথবা নির্বুদ্ধিতা হিসেবেও বোঝানো হয়. ঈশ্বরচন্দ্র লিখেছেন কেমনে চালাই সব তুমি হলে বুদ্ধির ঢেঁকি. অথবা বঙ্কিমচন্দ্র বলছেন, ভাই ঢেঁকির দল! তেমাদের বিদ্যাবুদ্ধি বুঝিয়াছি.
মোটামুটি বাংলায় সূত্রধরদের হাতেই ঢেঁকির জন্ম. সূত্রধরদের চারটি জ্ঞাতি - বর্ধমান, খড়িপেতে, ভাষ্কর, মন্দারণ. এই জ্ঞাতিভাগের মধ্যে খড়িপেতেরাই ঢেঁকির কারিগর. এঁরা মাটিতে কাঠ রেখে চকখড়ি দিয়ে দাগ দিয়ে কাঠোর নানান অবয়ব তৈরি করতেন. তাই এঁদের নাম খড়াপেতে.
সাধারণতঃ বাবলাকাঠেরই ঢেঁকি ভাল হয়, আর হয় নিমকাঠের. কিন্তু দারুব্রহ্ম জগন্নাথ যেহেতু নিমকাঠের তৈরি সেহেতু পা পাড়া ঢেঁকি নিম কাঠে তৈরি হয় না. আমড়া কাঠের ঢেঁকি থেকে বোঝা যায় পলকা কাঠ দিয়ে ঢেঁকি হয় না, হয় ভারি কাঠ দিয়েই. 
সেদন পর্যন্ত বাড়ির ঢেঁকিশালের অন্য মর্যাদা ছিল. বিশেষ করে বাড়ির বউ-ঝিদের কাছে. ঢেঁকির কাজ ছিল ধান থেকে চাল তৈরি করা আর চিড়ে কোটা. আর চলগুঁড়োও হত ঢেঁকিতে. সেই চালগুঁড়ো যেমন তরিতরকারি, নানান ভাজার বাইরের আস্তরণ তৈরির কাজে লাগত, আরও বেশি লাগত পিঠে তৈরির কাজেও. পাটিসপটা, পুরপিঠে, ভাপাপিঠে, পুলি, তেলপিঠে, পোয়া পিঠেসহ হাজারে ধরণের পিঠে হত এই চালগুঁড়ো দিয়ে. এই ঢেঁকিতেই বিভিন্ন ধরণের শষ্যদানা - ডাল ছাঁটাই আর গুঁড়ো হত.