Tuesday, March 29, 2011

বাংলার ধানের গোলা২


কড়ুই
বাখারির চাটাই দিয়ে মাটির মেঝে করে(বর্তমানে সিমেন্টের মেঝে) কড়ুই তৈরি হয়. সাধারণতঃ ঘরামিরাই এধরনের পরিকাঠামো তৈরি করেন. কাঠামো তৈরি পর জনে ভিজিয়ে রাখা হয়. তারপর শুকিয়ে আলকাতরা মাখানো হয় দীর্ঘ সময়ে বাঁচিয়ে রাখার জন্য.  উল্টো শঙ্কুআকৃতির হয় কড়ুই. ধান ঢালার জন্য ওপরে বড় দ্বার আর নিচে ধান বের করার জন্য ছোট দ্বার তৈরি হয়. কড়ুএএর ভিতরের দিকে মাটি, খড়েরকুচি, আর গোবর জলে গুলে প্রলেপ দেওয়া হয়. এই প্রলেপের জন্য কড়ুইতে অতিরিক্ত হাওয়া ঢুকতে পারে না. কড়ুইএর ছাদ মরাইএরমতই ছাওয়া হয়. ছোট থেকে বড় নানান আকৃতির কড়়ুই হয়. ৩০ থেকে ২৫০ মন পর্যন্ত ধান এই আধারে রাখা যায়. সাত থেকে ১০ হাত পর্যন্ত এইগুলি উঁচু হয়. মাঝেমধ্যে দেওয়ালে আলকাতরা লাগিয়ে আর মেঝেতে গোবরের প্রলেপ নিকিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়.
ডোল
অনেকগুলি চটের বস্তা পরপর সেলাই করে জুড়ে বড়সড় ব্যাগের আকার দেওয়া হয়. একেই ডোল বলে. এর মধ্যে ধান রাখা হয়. খড় মাটিতে বিছিয়ে তার ওপর সেলাইকরা ডোল রেখে তার ওপর দিয়ে ধান ঢালা হয় এবং এমন এক যায়গায় রাখা হয়, যাতে মাথার ওপর ছাউনি থাকে. বন্যাকবলিত এলাকায় প্রয়োজনে ধানের বস্তাগুলোকে সহজেই চালে ঝুলিয়ে রাখার ব্যবস্থা হল ডোল.
বাঁদি
নানান আদিবাসী অঞ্চলের ধান রাখার পাত্র বাঁদি. খড় দিয়ে কোকুনেরমত আধার তৈরি করা হয় তার নাম বাঁদি. আড়াই থেকে তিন ফিট আকারের এই বাঁদি হয়. বর দিয়েই জড়িয়ে এই বাঁদি তৈরি করা হয়. দু থেকে তিন মনেরমত ধান এই বাঁদিতে রাখা হয়. ঘরের উঁচু স্থানে বাঁদিগুলি মাচা বেঁধে রাখা হয়. কোড়া, সাঁওতাল সমাজ এই ধরনের আধারে ধান রাখেন. 
ধান্যগলি
হুগলির আরামবাগ অঞ্চলে মাটির বাড়ি তৈরির সময় দেওয়ালের মধ্যে কলাগাছের কান্ডেরমত পচনশীল সামগ্রী রেখে দেওয়াল তৈরি হয়ে গেলে দেওয়ালে ভেতরে খাঁকা অঞ্চল গলিরমত দেখতে হয়. তাই এই নাম গলি, আর ধান রাখা হয় বলে এর নাম ধান্যগলি. দুতিন তলা মাটির বাড়ি হলে এই এই গলিপথ বেশ বড় হয়. ওপর থেকে ধান ঢেলে নিচে ধান বের করানোর স্থানটি কপাট দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়. প্রয়োজনে কপাট খুলে ধান বের করা হয়.

বাংলার ধানের গোলা১

সারা পৃথিবীর ধান্যউত্পাদক অঞ্চলেই ধান রাখার আগারের কথা পাওয়া গিয়েছে. বাংলার নানান প্রান্তে নানান ধরনের ধান গোলা তৈরি হয়. গঠণের তারতম্যে এদের ভিন্ন ভিন্ন নামকরণ হয়. মরাই বা তলা, কড়ুই, বাঁদি, ডোল ইত্যাদি.
গোলা
প্রচুর পরিমান ধান রাখা যায়. অন্ততঃ ৫ থেকে ১০ মন পর্যন্ত. সেগুলির চেহারা অনেকটা আয়তকার বাড়িরমত. মেঝে সাধারণতঃ মাটিরই হয়, আবার পাকাও হতে পারে. এর স্থান মাটির কিছু ওপরেই. এর ভেতরে এক বা অনেক কুঠুরিও থাকতে  পারে. গোলার দেওয়ালে থাকে জানালা. মই বা সিঁড়িতে উঠে এই গোলাতে ঢুকতে হয়. গোলার দেওয়াল নিকোনো মাটিরও হতেপারে আবার আজকালের রীতি অনুযায়ী সিমেন্ট দিয়ে লেপাও হয়. গোলার নিচের ছোট দ্বার খুলে দিয়ে নানান সময়ে প্রয়োজনে ধান দেরকরা হয়.
মরাই
মরাই নানান কিছু দিয়েই হতে পারে. দক্ষিণ বঙ্গের নানান জেলায় হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর পূ, বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া প্রভৃতি জেলায় খড়ের দড়ি পাকিয়ে পাকিয়ে প্রায় শঙ্কু আকৃতির ২০ থেকে ৪০ হাত পর্যন্ত উঁচুও মরাই তৈরি হয়. এছাড়াও বাঁশের বাঁখারির বুকো বা বোনা চাটাই দিয়েও মরাই তৈরি হয়. মরাইতে সাধারণতঃ ১ থেকে ৪ মন পর্যন্ত ধান রাখা যায়. মরাই তৈরির পদ্ধতি দেশজ কারিগরি দক্ষতার একটি বড় শৃঙ্গ.
মরাইএর প্রধান উপকরণ পাকানো অথবা বিনুনি পাকানো খড়ের দড়ি, বীরভূমে যাকে বর বলে.  খড়গুলিকে আগি ভিজিয়ে রেখে শুকিয়ে নিয়ে নরমন করা হয়. এবার পাকানোর কাজ. একহাতে কাজ হলে বিনুনিটি বেশ চওড়া হয় আর দুই হাতে - একজন পাকানো আর এক জন খড়ের যোগান দিলে সেই বিনুনি অনেক সরু হয়. খড়ের পর খড় জুড়ে দীর্ঘ বিনুনি তৈরি করা হয়. সাধারণতঃ নিম্ন আয় সম্পন্ন বাড়িতে এক জন সাহায্যকারী থাকেন যিনি দক্ষ কারিগরকে হাতজুড়ে সাহায্য করেন.
মরাই তৈরির জন্য মাটির ওপর সমান্তরাল দুটি মাটির দেওয়াল তৈরি করা হয়. একে পায়া বলে. এক ওপর সমান্তরালভাবে বাঁশ সাজিয়ে মেঝেটা ঘন করা হয়. মেঝে হয় দুই হাত থেকে তিন হাত ব্যাসের. মাটি থেকে দেড় থেকে ৩ হাত উঁচু হতে পাকে এই মেঝে. মেঝেয় ঘনকরে সাজানো বাঁশের ওপর খড় বিছিয়ে দেওয়া হয়. যেমন আকৃতির মরাই গৃহস্থ চাইছেন সেই আকৃতির মেঝে করে সেটির ওপরে বরকে গোল করে ঘুরিয়ে রাখা হয়. এই বরগুলেকে ঠিকঠাক গোল করার জন্য বাঁশের বাতা দিয়ে টেনে রাখা হয়, যাতে এগুলি গুটিয়ে না যায়. নিচের থেকে ওপরের অংশ এনেকটা চওড়া হয়. বরের ভেতরের অংশে বরগুলিকে ঘণকরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়.
এবারে মরাইএর ওপরে ছাওয়ার পালা. আরএক প্রকার পাকানো দড়ি যাকে বুট বলে, তা নিচেরদিকে বেড় দেওয়া হয়. বেড়ের ভেতর খড়কে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়. পুরো মরাই তৈরি হয়ে গেলে মাথা ছাওয়ার কাজ. খড়ের গোড়র দিকটা ছাউনির ভেতরে থাকে আর মাথার দিকটা বাইরে. প্রায় শপণেরমত খড় লাগে একটা মরাই ছাইতে. ছাওয়ার পর এবার মাথায় খড় দিয়ে মুকুট তৈরি হয়, যাতে ভেতরে জল না পড়ে. 
মরাইতে দুতিন বছর পর্যন্ত ধান রাখা যায়. ধান বের করা হয়েগেলে বরগুলি গুছিয়ে রাখতে হয়. ধান বের করার দরকার হলে নিচের দিকের দুচি বরের মাঝখানে শাবল দিয়ে ফাঁক করে এই ফাঁকে একটা বাতা গুঁজে ফাঁকটা রেখে দেওয়া হয়. এবার সামনে মেচলা বা যে কোনো পাত্র ধরলে সেই পাত্রে ধান পড়ে. তবে খুব বেশি ধান এই মরাই থেকে বের করা হয় না, ধসে পড়ার আশংকা থাকে.

Monday, March 28, 2011

ধূসর মৃত্যুর ছায়া – লোকনাট্যের সন্ধানে এক পরিক্রমা৬


সাধারণতঃ ছোকরাদের ছাড়া আর কোনও শিল্পীর পোষাকের প্রতি নজর দেওয়া হয় না একটা ময়লা ধুতি, ছেঁড়া চটি পরে কোনও অভিনেতা হয়ত মঞ্চে এসে বলেন সে অমুক দেশের রাজা বা তমুক গ্রামের মোড়ল এই অতিশয়াক্তিতে কোনো দর্শকের বিন্দুমাত্র চিত্র বিক্ষেপ ঘটে না আর যে অভিনেতা আগের মুহূর্তে রাজার বা রানীর চরিত্রে অভিনয় করে মাতিয়ে দিয়ে গেল বা বাজনদারদের সঙ্গে প্রকাশ্য মঞ্চে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে ধুয়া ধরছিল তারস্বরে সেই হয়ত মাথায় ঘোমটা টেনে অর্থাত মাথায় পেতে রাখা গামছাকে মুখের ওপর একটু ঝুঁকিয়ে দিয়ে ঘোমটারমত করে রাজবাড়ির দাসী হয়ে অভিনয় করে আবার নিরুপদ্রবে ধুয়ো ধরতে বসে যায় আধুনিক নাটকের এটাচমেন্ট – ডিটাচমেন্ট তত্ব তাঁরা শতাব্দর পর শতাব্দধরে প্রয়োগ করে চলেছেন তারা বোধহয় জানেন না এর পরেও পশ্চিমি ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত উচ্চবর্নের শহুরে সমালোচকেরা চসমা উঁচিয়ে, ভুরু তুলে, নাক কুঁচকে নিদান দেবেন গ্রামের লোকনাট্যে সূক্ষ্মতার পরিবর্তে স্থূলতাই বেশি করে প্রকাশ ঘটে
কয়েক বছর আগে পশুপতি প্রসাদ মাহাতোর ভাঁড় যাত্রা দেখার অভিজ্ঞতা শেনাচ্ছিলেন, বলছিলেন কীভাবে থার্ড থিয়েচারের বীজ ছড়িয়ে রয়েছে তথাকথিত নিরক্ষর অথচ অভিকর শিল্পে জ্ঞাণীগুণী মানুষদের কাজে আগেই উল্লেখ করা গিয়েছিল, লোকনাট্যের অনেক আঙ্গিকেই প্রথাগত সাজঘর না থাকায়, অভিনেতারা অভিনয় করার পর বাদ্যকরেদের সঙ্গে বসে কালক্ষেপ করেন. তাদের সঙ্গী হয়ে ধুয়াও ধরেন. চারদিক খোলা মঞ্চে অভিনয়ের জন্য বর্তমান আধুনিক প্রসেনিয়াম নাটকে প্রযুক্ত ক্লক ওয়াইজ আর এন্টি ক্লক ওয়াইজ পদক্ষেপণের জন্য দেহারদের অক্ষদণ্ডধরে অভিনেতারা অভিনয় করেন. এখানেই লোক নাটকের প্রয়োগবাদিতার সমাপ্তি ঘটেনা. সাধারণতঃ যে অঞ্চলে কালাকুশলীরা অভিনয় করতে যান, সেই অঞ্চলেরই কোনও এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে পালাগান বাঁধেন তাঁরা. পুরোটাই কিন্তু গানের ওপর নির্ভর করে. আর অধিকাংশ অভিনেতা নিরক্ষর হওয়ায় তাঁরা কণ্ঠস্থ রাখেন সমগ্র গানগুলি. এই গানগুলির ওপর বিনি সুতোর মালা গাঁথা হয় তাত্ক্ষণিক কথোপকথনের মাধ্যমে. মনসা মঙ্গল বা বিষহরি পালার শেষে অভিনেতারা মনসার উদ্দেশ্য নিবেদিত থালা হাতে করে নেমেযান দর্শকাসনে. গ্রাম্য মহিলারা থালার রাখা প্রদীপের পাশের সিঁদুরে আঙুল ছুঁইয়ে চুড়িতে, সিঁথিতে বুলিয়ে দেন আর প্রদীপের শিখার ওপর হাতের চেটো ধরে সেই তাপ সঞ্চার করেদেন পরবর্তী প্রজন্মের বুকের অন্তরে. প্রতিদানে অবশ্যই দেন কিছুমাত্র দক্ষিণা.
যার মধ্যে এত সম্ভাবনা, যে সংস্কৃতির মধ্যে অন্তঃসলিলা স্রোতেরমত বয়ে চলে দেশজ মানুষের সমষ্টির সবাইকে নিয়ে বাঁচার দর্শণ, যার টানে আজও গ্রামে-গঞ্জে টিভি-সিনেমা-যাত্রার মায়াকুহকময়বিতংস ছাড়িয়েও দর্শক ভিড় করেন পালাগানের টানে, যে ভারতীয় ঐতিহ্যকে সমস্ত কালাপাহাড়ি আক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে নিয়ে চলেছেন এই দুর্দিনে, কেন তার গায়ে অস্তগামী সূর্যের ম্লান কিরণরেখা, কেন তাকে আজও স্বীকার করতে কুণ্ঠা, এই এত কেনর উত্তর পাওয়াটা বেধহয় খুব একটা শক্ত কাজ নয়. তবুও লেটোর হরকুমার, আলকাপের করুণাকান্ত বা অন্যান্য পালাগানের সংদারদের অসম্ভব দেশজ হাল না ছাড়া জেদেই মাটির সুর আর মাটির গান টিকে রয়েছে টিমটিম করে, প্রত্যকটি সমাজের নতুন প্রজন্মের আর সরকারি সমস্ত উপেক্ষা সত্বেও. আজ এক সন্ধিক্ষণ সমাসন্ন, যে সময়ে নতুন করে এই সমস্ত সহজ অথচ অনির্দেশ্য উত্তরগুলি খোঁজার সময় এসেছে শহুরে উদ্যমী, অনুসন্ধিত্সু মানুষজনের সামনে, বিশেষ করে আগামীপ্রজন্মের সামনে কোনো নির্দেশকময় কাজ না করে যেতে পারলে উত্তরপ্রজন্মের ক্ষমা আর পাওয়া যাবে না এ কথা স্পষ্ট করে আজই বলে দেওয়া যাক.

ধূসর মৃত্যুর ছায়া – লোকনাট্যের সন্ধানে এক পরিক্রমা৫


এই ধরণের জনঅংশগ্রহণ শুধুই যে আলকাপে ঘটে বললে পশ্চিমিধারায় সত্যের অপলাপ হবেতো বটেই, কেননা লেটো, গম্ভীরা, মাছানি, বনবিবির পালারমত নানান অঞ্চলের লোক নাট্যের ক্ষেত্রেও সমানভাবে সত্য লোকনাট্য বললে যেন মনে হয়, শুধুই নাটক এই আঙ্গিকের মূল স্তম্ভ নয়, গান আর নাচের সমবিব্যহারে গড়েওঠে একটি লোকনাটকের আঙ্গিক ভারতীয় সিনেমায় হঠাত হঠাতই গান গেয়ে ওঠে নায়ক বা পার্শ্বচরিত্র, সেটাই আদত লোক নাটকের দান আগেই বলাগিয়েছে, লোকনাট্যের প্রত্যেক কুশীলবই যেন স্বয়ংসম্পূর্ণ শিল্পী নাচ, গান আর অভিনয় – অভিকর শিল্পের এই তিন মূল স্তম্ভে সমাভাবে দক্ষতা অর্জন করেছেন তাই গ্রামীণেরা রাতে শুধু নাটক দেখতে যান না, তারা পালা-গান বা শুধুই গান দেখতে যান, যা শহুরে যাত্রাগানের ক্ষেত্রেও সমান প্রযোজ্য তাই অনায়াসে গান গেয়ে ওঠেন রাজা-রানী – এর জন্য অলাদা পরিমণ্ডল তৈরিরও প্রয়োজন হয়না, হাজার হাজার বছরের রসজ্ঞানী দর্শক হতচকিত না হয়ে, যেন তৈরিই থাকেন এমন এক শৈল্পিক বাঁকের সামনে
বাংলার দক্ষিণ অঞ্চলে লোকনাট্যের অন্যতম প্রদান উপাদান ছোকরারা এঁরা নাচে, গানে, লাস্যে উজ্জ্বল করে রাখেন লোকনাট্যের আসর আর তার প্রধান পৃষ্ঠপোষক দর্শককুলকে এই ছোকরাদের অভিনয় প্রতিভা কোনো প্রতিষ্ঠিত মহিলা শিল্পীর থেকে একচুলও ন্যুন নয় শ্রদ্ধেয় সিরাজমশাইএর জবানিতে শোনা যাক – মোয়েদের হৃদয় ও মুখমন্ডল বিশিষ্ট তরুণ পুরুষের শরীরে কিংবদন্তীর গ্রাম পরীরা কীভাবে অনপ্রবেশ করে দেখেছি আলকাপ দলের নাচিয়ে ছোকরার প্রেমো পড়েছি অচরিতার্থ কামনায় জ্বলে মরেছি ১৯৫০এ তার ছিল চৌদ্দ বছর অপূর্ব মুখশ্রী আর দেহের গড়ন ওকে ছেলে বলে চেনা কঠিন ছিল আমার প্রথম বিভ্রম সে সেই ভালবাসা কেনো মেয়েকে দেওয়া যায়না কারন তার সবটাই ছিল মনের আর শুদ্ধতার তার শারীরিক নটে গাছটি মুড়িয়ে যায় না – দীর্ঘ মিথে বেঁচে থাকে(দেশ সাহিত্য সংখ্যা, ১৩৮৩) এক ছোকরাকে নিয়ে দুই ধনবান পুরুষের লাঠালাঠিতে বেঁচে গেছে কত দল ভেঙেছে কত পরিবারের দাম্পত্য এরকম বহু জনশ্রুতি শোনাযাবে আলকাপের ধাত্রীঅঞ্চল ভাগবানগেলা গ্রামেরমত পশ্চিমবঙ্গের কত কত গ্রামে আজও শুধু আলকাপ নয় নানান লোকনাট্যের দলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে কত বুকভাঙা কাহিনীর দীর্ঘশ্বাস লেটোর কৃতি সংদার হর কুমার গুপ্ত আর আলকাপের কে কে(করুণাকান্ত) হাজরা শুনিয়েছিলেন এরকম নানান কাহিনী আজ থেকে অন্ততঃ বিশ বছর পূর্বে
যাঁরা কোনো লোক নাট্য দলের মহড়া দেখেছেন তাঁরাই সাক্ষ্যদেবেন যে, এঁরা কেউ শহুরে বিশেষজ্ঞদের বর্ণনায় স্বভাব শিল্পী নন সকলেই সমান পরিশ্রমে সমান শৈল্পিক প্রচেষ্টায় নিজেকে তিন তিন করে গড়ে তোলেন নিজেদের গ্রামে হ্যাজাকের আলোর সামনে বছরের পর বছর হাজার হাজার কালো মাথা আর খাটিয়ে হৃদয় ভেদ করে এক একজন প্রশিক্ষিত শিল্পীই তার সম্মোহনকারী স্বরক্ষেপ, অভিনয়, বাজনা দর্শকদের অন্তঃস্থলে প্রবেশ করতে পারেন, শুধু স্বভাবে একদিন বা দুদিনই ঘটতে পারে, কিন্তু দীর্ঘকালের কঠোর অনুশীলনই পারে একদল শিল্পী বা দলকে কিংবদন্তীর পর্যায়ে তুলে নিয়ে যেতে
ছোকরারা ভূমি মঞ্চে প্রবেশ করেন আসর বন্দনায় বন্দনার বিযয় নানান ধরনের হতে পারে মঞ্চ থেকে গুরু, পিতা-মাতা থেকে পরিবেশ, গ্রাম থেকে উপস্থিত দর্শক, দেবদেবী (যে কোনো ধর্মের) থেকে চতুর্দিক সব কিছুই চলে আসে বন্দনাংশে বন্দনাশিল্পীদের আশা, প্রণাম চাওয়া সকলের আশীর্বাদ যেন দলের মাথায় আশিসস্বরূপ ঝরে পড়ে আর তাদের দলের গান দর্শকদের গ্রহনীয় হয় বোলানের একটি ছোট বন্দনা, প্রণমি গণরায় আমারে দেহ অভয়, তোমারি করুণায় বেদনা দূরে যায়, দয়াময়ী দীন তারিনী সেজো না আর পাষাণী, ভবানী ভৈরবী তুমি পাষাণের নন্দিনী লেটোর বন্দনা বাহিরের পুজা বাহিরে মা গো-, বাহিরের পুজা বাহিরে নাও, অন্তরের পুজা অন্তরে নাও মা আমার, আরতি ধর মা আমার এবার আলকাপ জগজ্জননী মাগো তারা, জগতকে তরালি, আমারে কাঁদালি, আমি কী মাতোর চরণ ছাড়া, জগজ্জননী মাগে তারা গানের শেষ পদটি ধুয়ো বা ধ্রুবপদ বাজনদারদের সঙ্গে বসে দোহারেরী শেষ পদটি নিয়ে ধুয়া ধরত ছোকরাদের গানসহ নাচের শেষে

ধূসর মৃত্যুর ছায়া – লোকনাট্যের সন্ধানে এক পরিক্রমা৪


বাংলার ধারের শিল্প, প্রসেনিয়াম থিয়েটারের যখন পিঠ দেওয়ালে ঠেকেছে, তখনই শুরু হয়েছে, সেই বদ্ধজলা থেকে বেরোনোর বিকল্প রাস্তার, আঙ্গিকের খোঁজ সেই আঙ্গিকের খোঁজে শহুরে ধারকরা নাট্য পা বাড়িয়েছে লোকনাট্যের ব্রাত্য আঙিনায় সেই খোঁজ কতটা আন্তরিক আর কতটা দায়ে পড়ে সেই পশ্চিমি বিতর্কে না ঢুকে বলা যায়, শহুরে সমাজ আজ বুঝেছে ধারের সম্পদে ঝুলি ভরলে সেই ধারের ভারে একদিন ন্যুব্জ হতেই হয় তাই ফিরে চলা শেকড়ের পানে একে একে কলকাতার প্রসেনিয়াম থিয়েটার, যারা বিকল্প ভাবনা, আঙ্গিকের কথা বলেন, একে একে আপন করে নিলেন নানান লৌকিক লোক নাটকের আঙ্গিক যে কেনো নাট্য উত্সবে লৌকিক আঙ্গিকের নাটক দেখার জন্য লাইন এখন কিংবদন্তির পর্যায়ে, শম্ভু মিত্রের চাঁদ বণিকের পালা শুধুই পাঠ দেখা, মাধব মালঞ্চি কইন্যা, চাক ভাঙা মধু আথবা গোপীচন্দ্রের পালা ভেঙে দেয় সমস্ত নাট্য প্রযোজনার অতীত গৌরব
আর নতুন করে পশ্চিম থেকে ধার করা থার্ড থিয়েটার, বা থিয়েটার ফর দ্য অপ্রেসড তার প্রেরণা কিন্তু এসেছে লৌকিক নাট্য থেকে বিংশ শতকের মাঝের দিকে যখন পশ্চিমি(যাকে বাঙালি মধ্যবিত্ত শ্রদ্ধাভরে আন্তর্জাতিক ছাপ মেরে দিয়েছে) চিত্রকলা প্রায় গতিহীন হয়ে পড়ে, তখন তাকে পথ দেখাল আফ্রিকার প্রাচীণ মুখোশ, গুহাচিত্র আর অতীতের গুহাচিত্রাবলী আজ বাংলায় যখন প্রবাদপ্রতীম প্রসেনিয়াম থিয়েটার মুখ থুবড়ে পড়ছে, তার সামনে বিশাল একটা প্রশ্ন চিহ্ন ঝুলে রয়েছে, তখন তাকে সসম্মানে পথ দেখাচ্ছে একদা ব্রাত্য, অশ্লীল, বাংলার নানান লৌকিক নাট্য আঙ্গিক
পথ দেখানোর কথাই যখন উঠল, তখন একবার বাংলার লোক নাট্যের আঙ্গিকের অন্দরে ঝাঁকি দর্শণ করে আসা যাক বিশ্বের নানান দেশের লোকনাট্যেরমতই বাংলার লোক নাট্যের অধিকাংশই অভিনীত হয় ভূমি মঞ্চেস প্রসেনিয়ামেরমত অভিনেতা অথবা দর্শকের মধ্যে থাকেনা কোনো আড়াল বা দার্শনিক বিভাজন, লৌকিক জীবনের অংশিদারি দর্শনের অনুসরনে সকলেই যেন একস্তরেই অবস্থান সেখানে না থাকে কেনো উইংসএর চাপানো বাহুল্য, থাকেনা কোনো তৈরি করা সাজঘর লৌকক নাটকে বাজনদারেরা একটা বড় অংশ পালন করেন তাঁরাও যেন একটা বড় অংশিদার আর এই নাট্য আঙ্গিকের প্রত্যেক অংশিদারেরাই যেন পরিপূর্ণ শিল্পীর মর্যাদা পেয়ে আসেন, তাই কখোনো কখোনো বাজনদারেরাই অবলীলায় অভিনয়ও করেন অথবা গানও গেয়ে ওঠেন কোনো আঙ্গিকে বাজনদারেরা বলেন আসরের মাঝে আবার কোনো আঙ্গিকে বলেন আসর ঘিরে, মাঝখানের ছাড়া অংশে অভিনীত হয় আলকাপ পুস্তকে ফণি পালমশাই বলছেন, চণ্ডী মণ্ডপে বা পার্শ্ববর্তী ভাঙা হাটের খোলা ময়দানে বাঁশ পুঁতে সামিয়ানা টাঙিয়েছে অভাবে কোথাও কোথাও আবার চট বা চাটাই টাঙানো আশ্চর্যের নয় মাতব্বর লোকেরা বাড়ি বাড়ি ঘুরে কিছু চাল ডাল সংগ্রহ করছেন, কিছু টাকাও চাল ডাল সংগ্রহ করে আলকাপ দলের লোকজনদের খাওয়াতে হবে আর টাকাটা বখশিস

ধূসর মৃত্যুর ছায়া – লোকনাট্যের সন্ধানে এক পরিক্রমা৩


কোম্পানি আমলের প্রথম থেকেই গ্রামীণ বাঙালি লুঠেরা কোম্পানি রাজের ওপর খড়্গহস্ত তিতুমীরের আন্দোলন দিয়ে যে বিদ্রোহী গ্রামীণ লৌকিক বাংলার জয় যাত্রা শুরু, সেই জয়যাত্রা শেষ হবে স্বাধীণতা আন্দোলনের পর নতুন করে পশ্চিমিভাবধারায় উদ্বুদ্ধ শাসক মধ্যবিত্তের হাতে পরাধীন হয়ে অথচ শহুরে বাঙালিরা ঠিক ততখানি উদারতার সঙ্গেই সঙ্গ দিচ্ছে কোম্পানির নানান উদ্যমকে তাই শহুরে বাংলা গদ্যের বিকাশে বিদেশিয়দের, অভিযাত্রিকদের, ধর্মপরিবর্তকদের ভূমিকা বেশ বেশি বলেও গ্রামীণ সংস্কৃতির বিকাশে এঁদের ভূমিকা স্বাভাবিকভাবেই খুব বেশি নেই বললেই চলে প্রথম থেকেই গ্রামীণ বাংলাকে বর্জন করেছিল ব্রিটিশ শাসক বাংলায় এক লাক পাঠশালা ভংস করে সর্বশিক্ষার ধারণাটাকেই শহুরে মধ্যবিত্তের সহায়তায় উপড়ে ফেলল ততকালীন রাজশক্তি ধর্মপ্রচার, ধর্মপরিবর্তন এবং এদেশের নানান প্রযুক্তি, শিক্ষা ব্যবস্থা, এবং নানান তথ্য পঞ্জীকরণ করতে গিয়ে(আদতে তা চুরিই) দেখলেন হাজার হাজার বছর ধরে লৌকিক বাঙালিরা এক সমৃদ্ধশালী বাংলা গড়েছে এই সমৃদ্ধ সমাজকে তাঁরা দেগে দিলেন অবোধ, অজ্ঞ আর পিছিয়ে পড়া হিসেবে ফলে মেকলের পদ্ধতিতে শিক্ষিত বাঙালির একটা বড় অংশ দুরছাই করলেন তাঁর নিজের সংস্কৃতির শেকড় থেকে দূরে সরে গিয়ে
তবুও বিদেশিয় শিক্ষাব্যবস্থা বিদেশিয় দর্শেণের বাইরে বেরিয়ে এসে এক ঝাঁক মানুষের প্রণোদনা জাগল শেকড়ে ফিরে যাওয়ার গ্রামীণ মানুষের মুখের কাহিনী, সঙ্গীত, নাটক, শিল্প পুনরুদ্ধারে তাঁদের অনেকেই জাবনপণ করলেন সেই প্রণোদনায় গড়ে উঠল বিদেশিপ্রভাবের বাইরে বেরিয়ে এসে নতুন করে দেশ আর তার মানুষ, তাদের সংস্কৃতিকে জানার আকুলতা অথচ এদের মধ্যেও বিভেদের রূপরেখা দেখা দিল ক্রমশঃ লোক সাহিত্য যখন নতুন করে তার পথ খুঁজে নিচ্ছে নিজস্ব গতিজাড্যে, তখন লৌকিক নাটককে আদৌ সাহিত্য বলা হবে কীনা, তা নিয়ে চুলচেরা বিরোধ দেখা দিচ্ছে দেশজ ভাবধারায় শিক্ষিত আর বিদেশিয় মেকলে পদ্ধতিতে কালো সীহেবদের মধ্যে দেশের মধ্যে নানান সাহিত্যিক কর্মকাণ্ডকে আলাদা করে দেখার দর্শণে উদ্বুদ্ধ শহুরে শিক্ষিতদের মধ্যে থানা গেড়েছে বেশ ভালভাবেই বিদেশিয় ভাবধারা অনুসরনকারীরা লোক সাহিত্যের মধ্যে ভাগ বয়ে নিয়ে এলেন উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে বিদেশিয় শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষিতরা সাহিত্য বলতে অনেকদিনই বুঝিয়েছেন, ছড়া, গীতিকা, গান, লোক-কথাকে লোকনাট্যও যে লোক সাহিত্যের এক শক্তিশালী মাধ্যম সেই তথ্যকে উদ্দেশ্যপূর্ণভাবেই উপেক্ষা করা হয়েছে দীর্ঘদিন বিপক্ষদের যুক্তি লোক নাটক অভিকর শিল্প বা পারফর্মিং আর্ট, তাই সে সাহিত্য পদবাচ্য নয় তখন দেশাভিমানিনী বিপক্ষ দল প্রশ্ন তুলল, লোক সঙ্গীত যদি সাহিত্যপদবাচ্য হতে পারে, তাহলে লোক নাটককে সাহিত্য অভিধা দানে কেন ইতস্তত করা! ভারতীয় নাট্য দর্শনে আমরা যে চুলচেরা বিভাগগুলি পাই তাতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে শিল্পী সঙ্গীত, নৃত্য আর নাট্যে পারদর্শী, তাকেই পরিপূর্ণ শিল্পীর অভিধা দেওয়া হয়েছে এবং লোক নাট্যগুলিতে স্বাভাবিকভাবেই ভারতীয় দর্শণ বর্ণিত পরিপূর্ণ শিল্পীর পরিচয় দেখতে পাই

ধূসর মৃত্যুর ছায়া – লোকনাট্যের সন্ধানে এক পরিক্রমা২


ছোটেলোকেরা যে আমোদ করে তাকেই বলে লেটো ভদ্রলোকের শোণার যোগ্য নয় এই রায় দিয়েছিলেন আমার ন-কাকা – পাঁচুগোপাল রায় হয়ত বিষন্ন কৌতুকে বিখেছিলেন সুকুমার সেনের নট নাট্য নাটক বইতে নিজের শর্টহ্যান্ডে নেওয়া একটি লেটে পালা সংযোজনের মুখবন্ধে লেটোরমতই বাংলার নানান প্রান্তজুড়ে ছড়িয়েথাকা আরও অনেক লোকনাটকে পাতে দেওয়ার যোগ্য বলেই মনে করেনি শহুরে পশ্চিম শিক্ষায় শিক্ষিত উচ্চবর্ণের সংস্কৃতির জ্যাঠাশাই ন-কাকারা বহু শত বছর ধরেই শহরের প্রান্তে নিজেদের এক নিজস্ব সমাজবীক্ষা গড়ে তুলে ছিলেন গ্রামীণ প্রচারবিমুখ অথচ সাংস্কৃতিভাবে ঋদ্ধ, চাহিদা-সংস্কৃতির বিরোধী এক যৌথ সংস্কৃতি গড়ে তুলে চাওয়া শিল্পীরা অথচ সুকুমার সেন মশাই প্রগুক্ত পুস্তকেই বলছেন, খ্রিস্টপূর্ব কাল থেকে আমাদের দেশে যে ধরনের নাট্যকর্ম পন্ডিতদের অগোচরে একটানা চনে আসছে বলাযায়, তার জের এখোনো পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান ও হুগলির দামোদর উপত্যকায় মুসলমান গুণীদের মধ্যেই সেদিন পর্যন্ত চলে এসেছে সুকুমারবাবু নিজে বর্ধমানের মানুষ ছিলেন, কিন্তু বর্ধমানের বাইরেও সারা বাংলা জুড়ে এই নাট্য জড়িয়ে রয়েছে শীতের মমতাময় কাঁথারমত ইংরেজ শাসনের আমল থেকেই শেকড় ছেঁড়া সংস্কৃতিতে উদ্বুদ্ধহয়ে ওঠা ইংরেজি শিক্ষিত উচ্চবর্ণ সমাজ পশ্চিমি শেকড় ছেঁড়া সংস্কৃতিতে দীক্ষিত শহুরে বাবুসমাজ নিজের শেকড় খুঁজতে না গিয়ে ভাঁড় শুঁকে মেতে উঠলেন, প্রসেনিয়াম থিয়েটার, চলচ্চিত্রের মুগ্ধতায় দেশের সংস্কৃতির প্রতি নতুন করে কোনো আগ্রহও গড়ে উঠলনা বুদ্ধিজীবিদের ধারণা ছিল চৈতন্য উত্তর বাংলার সংস্কৃতির ছিল বন্ধ্যা সে সময় কোনো আশার আলো দেখা যায়নি ব্রিটিশ আর ব্রিটিশের ধামাধরা সংস্কৃতির ইতিহাসের প্রবক্তাদের বক্তব্য ছিল, বাংলা সংস্কৃতিতে অন্ধকারের প্রতিচ্ছবি তাই অন্ধকারের তথাকথিত অনির্দেশ্য পথে না ছুটে তারা ছুটে চললেন উজ্জ্বল অথচ ভূমির সঙ্গে সম্পর্ক রহিত এক আলেয়ার পিছনে নিজেদের আপাত দৈন্য ঢাকতে বিভিন্ন তথ্যের মসলা ফোড়ন সহযোগে প্রমাণ করার চেষ্টা চলল চৈতন্য উত্তর বাংলা সংস্কৃতিতে সৃষ্টির দৈন্যের নানান তথ্য এ ধরনের মানুষজনের দাবি, বাংলার প্রণোদিত নবজাগরণের ধারাতেই তাঁরা পুনর্জন্ম প্রদান করলেন বঙ্গসংস্কৃতিকে এই সেদিন পর্যন্ত কয়েকজন সনাতন বাংলার সংস্কৃতিতে প্রণত উত্সাহী, গবেষক, পন্ডিত ছাড়া গ্রামীণ সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় ছিল না শহুরে হাতেগোণা নবজাগরণে অগ্রদূতেদের বঙ্গ গ্রামীণ সংস্কৃতির নামে বাঙালি যা পরিচয় পেয়েছে তা হল, শহুরে অনুসরণ হনুকরণপ্রিয় পিটুলিগোলাসম সংস্কৃতি শুধু চৈতন্যোত্তর সময়েই নয়, হাজার হাজার বছর ধরেই সমগ্র বাংলা নিজস্ব সংস্কৃতির জারন রসে নিজেকে টিকিয়ে, জারিয়ে রেখেছিল এটাই বাস্তব এই তত্বের বিরুদ্ধে একটাই প্রশ্ন তোলা যায় যে তিনশে বছর ধরে কোনো সভ্যতা কী সংস্কৃতি ছাড়া বেঁচে থাকতে পারে এর উত্তর পেতে পথে নামলেন একঝাঁক দেশের মাটির প্রতি দায়বদ্ধ এক ঝাঁক মানুষজন জবাব দিলেন
বাংলার শহুরে বুদ্ধিজীবিরা তখন লজ্জাজনক তুলনায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছিলেন নিজেদের সংস্কৃতির মহীরুহের পশ্চিমের নানান স্রষ্টার সঙ্গে তুলনা করছেন অবহেলে কেউ বাংলার শেলি, কেউবা বাংলার বায়রন আবার কেউবা বাংলার স্কট, আবার কেউ বাংলার গ্যারিক তবুও তাঁরা কেউ বাংলার নিজের সংস্কৃতির দিকে তাকিয়েও দেখার প্রয়োজন করলেন না আরও অভিযোগ উঠল যতটুকু সৃষ্টি হয়েছে এই সময়, তা সবই ধর্মাশ্রয়ী, এমত ইওরোপিয়মত প্রকাশকরেছেন সাহিত্য বিশেষজ্ঞরা সাংস্কৃতিক কর্ণধারেরা সকলেই ইওরোপবাদী ইওরোপের সাহিত্য আন্দোলন যেন তাঁদের নিজস্ব আন্দোলন তাঁরা কেউ বিচার করলেন না লৌকিক ধর্ম আর প্রাতিষ্ঠানিক বা রাজসভার ধর্মের মধ্যে পার্থক্যের কথা ধর্মাশ্রিত হলেও ধর্ম সবসময় মানুষের কথা বলেছে, তার দুঃখ, দুর্দশা আর তার থেকে নিরাময়ের কথা বাখান করেছে বাংলার দীর্ঘ সময় ধরে গ্রামগঞ্জের গীতিকা, মঙ্গল কাব্য অথবা রামায়ণ বা মহাভারতের অনুবাদে বার বার ফুটে উঠেছে সাধারণের জীবন যন্ত্রণা দেবতা রয়েছেন কিন্তু তিনি যেন লৌকিক মানুষ শিবায়ণ কাব্যের শিব আর চ্যংমুড়ি কানি সকলেই যেন লৌকিক মানুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন ভক্তি যতটা রয়েছে, ভয় ততটা যেন নেই ষোড়শ শতাব্দের শেষ দিকে বৈষ্ণব ধর্ম যোগী-তান্ত্রিক-সুফিদেরমত অবৈষ্ণব গুহ্য সাধকদের আকর্ষণ করতে শুরু করে, যেখান থেকেই আউল, বাউল, সহজিয়া, সাঁই কর্তাভজা প্রভৃতি সম্প্রদায়ের উদ্ভব বহু ভিন্নস্বরের সমারোহে বৈদিকযুগের বহু আগে থেকেই বিংশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত জীবনের জয়গানে বাংলার গ্রামীণেরা মুখর হয়ে উঠেছেন এবং অন্তরের ক্ষুতপিপাসা মিটিয়েছেন

ধূসর মৃত্যুর ছায়া – লোকনাট্যের সন্ধানে এক পরিক্রমা১


এই অত্যাশ্চর্য ধ্রুপদী লোকনাট্যরীতির জনপ্রিয়তা লোকসমাজে শ্রেষ্ঠতম আবার বলছি, শ্রেষ্ঠতম অবশ্য আরও লোক শিল্পেরমতই এর গায়েও মৃত্যুর ধূসর ছায়া পড়েছে – মায়ামৃদঙ্গ, সৈয়দ মুসতাফা সিরাজ
প্রায় তিনদশক আগে লেখা এক পথভাঙা উপন্যাসে সৈয়দ মুজতাফা সিরাজমশাই আলকাপ গান আর তার পরিবেশ পরিজন বর্ণনে পথপ্রদর্শকের ভূমিকা নিয়ে পরম মমতায় তুলে ধরলেন এর আগেও বহু মানুষ বিক্ষিপ্তভাবে আলকাপ নিয়ে ভেবেছেন, লিখেছেন অথবা তাকে নিয়ে শহরের প্রাঙ্গনে উপস্থাপন করেছেন, কিন্তু মায়ামৃদঙ্গ এমন একটি উপন্যাস, যার ব্যপ্তি শুধুই কাগজের পাতা ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে বাস্তবের কঠিন মাটিতে পলিমাটিরমত নরম তুলতুলে কলমেরঘাতে নিজের জীবনদিয়েই কিশোরী বেশী আলকাপ বালক আর আন্যান্য কুশিলবের দৈনন্দিন জীবনযন্ত্রণা, বাস্তব জীবন সংগ্রামের রক্তঝরা কাহিনী মরমীয়া কবিরমমতায় সৈয়দমশাই প্রথম তুলে এনেছিলেন শহরের বাবুসমাজের সামনে আজথেকে প্রায় চার আগেই মায়ামৃদঙ্গের রচনার সময়েই তিনি রচনা করেছিলেন, আলকাপের গায়ে ধূসর মৃত্যুর ছোঁয়া মন কেমন করা প্রতিবেদন দশক মুক্তগোলার্ধ রচনার নতুন সহস্রাব্দের প্রথম দশক শেষ, সেই ছায়া আরও দীর্ঘতর, আরও গাঢ়, আরও গভীর হয়ে চেপে বসেছে সিরাজমশাইএর সাধের আলকাপের পরতে পরতে বিশ্বজয়ী বৈদ্যুতিন মাধ্যমের বিকট মুখব্যদনে, কৃষি উত্পাদনের বিধ্বংসী কৌশলী কৃতকৌশলের পরিবর্তমে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে হাজার হজার বছরের মাটির সংস্কৃতি
তবে শুধুই আলকাপেরমত ব্যাপ্ত সংস্কৃতিই শুধু মৃত্যুর মুখেমুখি বললে অপনাপ হবে, লেটো, গম্ভীরা, বোলান, ডোমনি, মেছেনি, খন, দেতরা, বনবিবির পালারমত গ্রামীণ সংস্কৃতির লালনপালন করা শিল্পীদের চোখে বায়না না পাওয়ার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়ার বেদনা, অতলান্ত হাহাকার ক্রমাগত বর্ধমান শিল্প-শিল্পী-জীবন যে জীবনযাত্রায় মিনেমিশে একাকার, সেই জীবনে শিল্পকে আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার, শিল্পকে পেশ করার যন্ত্রণা প্রতিটি শিল্পীর জাবনে ফুটেউঠছে একদিকে দূরদর্শনে প্রতি সন্ধ্যায় অপরিসীম চাহিদা তৈরির কারখানার বাড়বাড়ন্ত অন্যদিকে শহরের শেকড়ছেঁড়া চাহিদাভিত্তিক সংস্কৃতির চাপে গ্রামীণ সংস্কৃতির নাভিশ্বাস শতাব্দের পর শতাব্দ গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে অন্তর্লীন স্রোতেরমত লৌকিক-গ্রামীণ সংসিকৃতি আজ দিশাহারা আপাত সহজিয়া দর্শনে জারিত কিন্তু বাস্তবে যথেষ্ট জটিল এই গ্রামীণ নাট্যের নানান প্রকাশভঙ্গী চলে যাচ্ছে বিস্মৃতির অন্তরালে কেউবা টিকে থাকার তাগিদে দূরদর্শণ অথবা যাত্রা বা চলচ্চিত্রের জাঁকজমকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মডার্ন পালার খোঁজে ব্যস্ত, কেউবা স্বরচিত শহুরে পল্লিগীতির প্রভাবে শহরতলীতে রেডিও-দূরদর্শণের তাবিজ তকমা ধারণ করে উদ্গ্রীব হয়ে উছেঠেন যেন তেন প্রকারেণ তথাকথিত শহুরে লেকসংস্কৃতির অপটু বিপননের আপাত সুখের টানে ভেসে চলেছেন কোন অজানা আগামীতে কে জানে!

Sunday, March 27, 2011

উত্তরবঙ্গের মুখা বা মুখোশ

সমগ্র বাংলা জুড়ে যতটুকু মুখোশের প্রাচুর্য রয়েছে, তার সন্ধান করা দেশজ সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধ সমাজের মানুষদের একান্ত প্রয়োজন. মালদহ থেকে শুরু করে  দার্জিলিং পর্যন্ত প্রায় প্রত্যেক জেলায় রয়েছে মুখা বা মুখোশের বৈচিত্র্য আর সমারোহ.
মালদহ
মালদহের মুখোশ সাধারণভাবেই মুখা নামে পরিচিত. যদিও গম্ভীরা গান বা পালার সঙ্গে এই মুখোশ একদা দেখা যেত আজ আর এই মুখোশের সচরাচর দেখা মেলে না. স্থানীয় শিল্পীরা বলেন, এবং সরকারি নানান প্রদর্শনী সাক্ষী,  একসময়ে এই মুখোশ তৈরি হত কাঠ দিয়ে, কিন্তু বর্তমানে এই মুখোশ তৈরি হয় মাটি দিয়ে. এদের মধ্যে নরসিংহ, কালি, রাম, কার্তিক, প্রেত, হনুমান, বুড়ো-বুড়ি, শিব, ভুত প্রভৃতি আজও তৈরি হয়.
গম্ভীরা বিষয়ে প্রথম শহরের মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হরিদাস পালিত আদ্যের গম্ভীরা বইতে লিখেছেন, মুখার উর্ধদিকে ও পশ্চাদংশে একটি এবং দুই কর্ণের পশ্চাতে দুইটি ছিদ্র দৃষ্ট হয়. মুখার ঘর্ষণ থেকে মুখ রক্ষার জন্য চাদর বা বস্ত্রখন্ড  দিয়া কর্ণ বেষ্টন করিয়া পাগড়ী বাঁধা হয়. বছরের শেষে গম্ভীরার নাচ আর মুখোশ দেখতে পাওয়া যায়. তবে নানান  কারনে দারুন দেখতে এই মুখোশগুলো সারা বাংলা জুড়ে লৌকিক শিল্পের দোকানে সচরাচর দেখতে পাওয়া যায়না. গম্ভীরা বা গাজনের সময় এগুলি পাওয়া যায়, মেলায় ওঠে, কিন্ত দাম পায় না, কেননা, গম্ভীরা শিল্পীছাড়া কেউই সাধারণতঃ এগুলি কেনেননা.
জলপাইগুড়ি
এই জেলার রাজবংশী সমাজ সমগ্র উত্তরবঙ্গেরমতই মুখোশকে মুখা বলেন. জলপাইগুড়ের মুখা-খেল কিন্তু গম্ভীরারমত শুধুই ধর্মীয় উত্সব নির্ভর নয় বলে, প্রায় সারা বছরই এই নাচ আর মুখোশ দেখা যায়. যদিও রাম-রাবণ, শিব-দুর্গা আর উত্তরবঙ্গের জাতীয়দেবী মনসার মুখা পাওয়া যায়. পৌরানিক বা ধর্মীয় ভাবনার পাশাপাশি সাধারণ জীবনের নানান ভাবনাও উঠে আসে এই মুখা খেলার মধ্যে.  এগুলি কাঠ, লাউ, পোড়ামাটি, পুরু কাগজ অথবা পাতলা শেলা দিয়ে তৈরি. কাঠের বা লাউএর খোলের ওপর কাদা দিয়ে ন্যকড়া এঁটে তার ওপর চিত্রকর এঁকে দেন. একমাত্র সূত্রধর সমাজেরই কোনো বিশেষ ব্যক্তি এই কাজটি করতে পারেন.
দিনাজপুর
দিনাজপুরে রাজবংশীদের পলিয়া আর দেশি সমাজে গমীরা খেলায় মুখা ব্যবহার হয়. এ অঞ্চলে মোখা নামে এটি পরিচিত. এগুলি একমাত্র ছৈতন বা ছাতিম গাছ দিয়ে তৈরি. গম্ভীরারমত মাটির মুখার প্রচলন নেই. তবে এই গমীরা-খেলার সঙ্গে গম্ভীরার কোনো ভাবগত সাজুজ্য নেই.  বুড়াবুড়ি, চামাড় কালি, উড়ান কালীর(শিকনি ঢাল)মত নানান বার্তাই এই নাচে দেওয়া হয়. রাম বনবাস পালায় অশোক বনের চেড়ি, হনুমান, পাতালের দানব, বাঘ, গন্ডার, ভালুক প্রভৃতি মুখোশ ব্যবহার হয়. হনুমানের মোখা শ্রদ্ধাসহকারে রাখা হয়.

দার্জিলিংএর মুখোশ নিয়ে আগেই আলোচনা হয়েছে.
একটা স্পষ্ট কথা বলা প্রয়োজন, এই অঞ্চলের মুখো নিয়ে ভারতীয় জাদুঘরের সবিতা রঞ্জন সরকার একবার কাজ করেছেন. সেই সংস্থা দ্বারা প্রকাশিত মাস্ক অব বেঙ্গল বইটি প্রথম এই মুখোশ নিয়ে ছবি প্রকাশ করে.

উত্তরবঙ্গের চৈতা গান

তার নাম চৈতা. সীমান্তবর্তী দিনাজপুরের লোক সংগীত. মকলা বাঁশে ঘেরা বাঁশবাড়ি গ্রামের পাশ দিয়ে বয়েছে মহানন্দা. একটু দূরেই জাতীয় সড়ক. রেলস্টশন আলুয়াবাড়ি. এই চৈত্র সন্ধ্যায় গ্রাম একত্রে মেয়ে পুরুষ এক সঙ্গে যে গান গেয়ে ওঠেন, তার নামই চৈতা. ক্রমশঃ এই গান ছড়িয়ে পড়ে নানান গ্রামে মহানন্দার পাড় ধরে. দার্জিলং জেলার তুরিয়াখালি আর চিতলঘাটা গ্রামে.
শুরু পয়লা চৈত্রের সন্ধ্যায়. মেয়েরা বাড়ি বসে খালিগলায় গান তোলে আর বাড়ি থেকে বারে বেরোনো পুরুষদের গানের সঙ্গের সঙ্গী খোল, মঞ্জিরা আর উত্তরবঙ্গের গানের সঙ্গে প্রায় সম নাম হয়ে ওঠা  দোতরা. অনেকটা সওয়াল জবাবের ঢংএ গান এগিয়ে চলে.
পড়িগেল চৈতকে ধুপ / আরে নেহারোয়া কৈসে যাই বারে...(চৈত্রের প্রখর রোদে কীভাবে বাড়ির বাইরে তাকাই), এরপর এক চৈতা গায়ক প্রশ্ন তোলেন, কোনা মাসে আমআরে / মঞ্জরী গেলহে রামা কোনা মাসে ধরলে টিকব? কোনমাসে আমের মুকুল আর কোন মাসে গুটি, এই প্রশ্নের উত্তরদেন আর এক চৈতা গায়ক, মাঘমাসে আমআরে মঞ্জরী গিল /চৈতা মাসে ধরালে টিকব অর্থাত মাঘ মাসে আমের মঞ্জরী আর চৈত্রতে তার গুটি.
গানের ভাষা কিন্তু ব্রজবুলির. যদিও এ গ্রামগুলোর বাসিন্দারা নিজেদের  বাঙালি আর মাহিষ্য বলে পরিচয়দেন, কিন্তু এই গানের কথা স্পষ্টই মৈথিলি ব্রজবুলি.
চৈত্রের চড়া রোদে ঘাটো ব্রত, গমীরা আর সিরুয়া পরব. সিরুয়ায় একে অপরের গায়ে ছুঁড়ে দেবে ধুলো, মাটি আর কাদা. ঘরের দেওয়ালে পড়বে রঙএর ছোপ, আঁকা হবে নানান ফুল, পাখি আর লতা.
মনেরাখতে হবে ঠিক এই সময়েই সারা ভোজপুরি এলাকা জুড়ে নরনারী সমবেতস্বরে গেয়ে ওঠে চৈতা গান.

Saturday, March 26, 2011

সেরপাই

বীরভূমের সিউড়ির কাছের এক গ্রাম, লোকপুর খ্যাত সেরপাই-এর জন্য. এই গ্রামেরই ভোলানাথ কর্মকার শুধু বাংলাই নয়, ভারতের নানান স্থানে বেশ নাম কুড়িয়েছেন সেরপাই তৈরির জন্য. ভোলানাথ এই শিল্পটি শিখেছেন তাঁর শ্বশুর মশাই কার্তিক কর্মকারের কাছ থেকে. আর যেহেতু লৌকিক শিল্পীদের পরিবারও সাধারণভাবে তাঁদের নানান কাজে হাত লাগান, সেরপাই তৈরিতে ভোলানাথের স্ত্রী রুমা আর কন্যা পুতুলও যথেষ্ট দক্ষ, কিন্তু তাঁরা ভোলানাথের সহকর্মীরূপেই বেশি কাজ করতে উতসাহী.

আগে আমকাঠ দিয়ে তৈরি হত সেরপাই, এখন হয় সেনাঝুরি দিয়ে. নির্দিষ্ট মাপ অনুযায়ী কেটে যে পাত্র বা খোনাটি তৈরি হয়, তার নাম ডোল. একে ঘসে মসৃণ করা হয়. ভুষো কালি, শিরিষ আঠা আর রজন দিয়ে কালো রং করা হয়. এর পর নকশা তৈরির পালা.
এর পর বাইরে তৈরি হয় পিতলের কারুকাজ, পিতলের পাত কেটে. পিতলের পাতের নকশার জন্য রয়েছে পুরোনো দিনের ফর্মা. নতুন সময়ে নতুন নতুন নকশারও প্রচলন হচ্ছে. তবে পুরোনোগুলো দেখতে কিন্তু বেশ সুন্দর. ফর্মা থেকে নকশা তুলে পাত কেটো ভ্রমর আর ফাইল দিয়ে সেই নকশা ফুটিয়ে তারপর এটি লাগানো হয় ডোল জুড়ে. এর পর পালিশ. তৈরি হল সেরপাই.